আলিফ আহমেদ

জন্মগতভাবেই দুই পা ও দুই হাত নেই আলিফ আহমেদের। পড়াশোনার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে তার কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই পা ও দুই হাত না থাকলেও তার স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার মানসিক মনোবল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন আলিফ আহমেদ। 

সোমবার (১ নভেম্বর) চবির ‘এ’ ইউনিটের দুই দিনের চার শিফটের ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় শিফটে পরীক্ষা দেন তিনি। আলিফ আহমেদের জন্ম বগুড়ার পাইকারপাড়া এলাকায়। বগুড়া পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরিজীবী। একমাত্র সন্তান আলিফকে তারা বর্তমানে ঢাকার সাভারে বসবাস করেন। 

হাত-পা না থাকলেও বন্ধুদের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন আলিফ। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নেন তিনি। বাসা থেকে শুরু করে পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যন্ত হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে যান তার বন্ধুরা। এবারও তার ব্যতীক্রম হয়নি। চবির ভর্তি পরীক্ষায় তার সঙ্গে আসেন চার বন্ধু নাফিউল, অর্ণব, রাজিন এবং নাইম। সবাই একই স্কুল-কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন। হাতের অর্ধেক অংশ না থাকলেও বাকি অংশ একসঙ্গে করে কলম চেপে ধরে লিখতে পারেন আলিফ। লিখতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি কষ্ট হলেও দুঃখ নেই আলিফের। 

আলিফ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সবসময়ই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি। আমার সীমাবদ্ধতা কখনো ভাবায় না। সেদিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আমি আমার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করি। বাবা-মায়ের সহযোগিতা না পেলে এসব কিছুই সম্ভব হতো না। তারা পাশে আছেন বলেই এ পর্যন্ত আসার সুযোগ হয়েছে। সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আমার বাবা-মাকে। তবে কখনও ভেঙে পড়েননি তারা। 

তিনি আরও বলেন, আমার বন্ধুরা সবসময় সহায়তা করেছে। তারা না থাকলে একা কোথাও যাওয়া আসা কষ্টসাধ্য ব্যাপার আমার জন্য। ঘর থেকে বের হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে তারা আমাকে সহায়তা করেছে। শুধু এখন না, আগে থেকেই তারা আমাকে সহায়তা করে আসছে। এরাই সত্যিকারের বন্ধু আমার কাছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন আলিফের। পড়তে চান কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথাও জানান তিনি।

আলিফের সঙ্গে আসা তার বন্ধু নাফিউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলিদের সঙ্গে আমাদের স্কুল থেকে বন্ধুত্ব। অনেক মিশুক এবং মেধাবী সে। হাত পা না থাকলেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে উভয় পরীক্ষায়। আমাদের সঙ্গে পড়াশোনা, আসা যাওয়া সব কিছুই করে সে। ভর্তি পরীক্ষাতেও আমাদের সঙ্গে সে আছে। সবাই মিলে তাকে সহায়তা করি। তার থেকেই আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।

আরএআর