বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগ কমিটি পাঁচ বছর পার হয়ে ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে আজ (১৭ নভেম্বর)। দীর্ঘ দিন ধরে এক কমিটি দিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি চলায় নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব গঠন করে সংগঠনিক কার্যক্রম বেগবান করার দাবি জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সবুজ কাজী ও মিয়া মোহাম্মদ রুবেলকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে বাকৃবি ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছর পর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ২১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল গত ৬ ফেব্রুয়ারি ধুমধাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। ক্যাম্পাসের কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সে বিয়েতে সহস্রাধিক গণ্যমান্য অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ২১১ সদস্যের কমিটিতে অর্ধেকের বেশি বিবাহিত এবং চাকরিরত রয়েছেন। ক্যাম্পাসে নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। 

এদিকে দীর্ঘ দিন কমিটি না হওয়ায় হতাশ পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। অনেকেই পদের আশায় দৌড়াদৌড়ি করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে। অনেকে আবার পদের আশায় থেকে চাকরির বয়স শেষ করেছেন। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকা ছাত্রলীগ নেতা নুর এ আলম তপন গত বছর রোগাক্রান্ত হয়ে ক্যাম্পাসের হলে মৃত্যুবরণ করেন। 

এদিকে বর্তমান ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ পাঁচ বছর পার হওয়ায় দেখা দিয়েছে গ্রুপিং। গ্রুপিংয়ের কারণে একই অনুষ্ঠান পৃথক পৃথকভাবে পালন করতে দেখা যায়। আর এই গ্রুপিংয়ের জের ধরেই কমিটির সদস্যদের মধ্যে চলছে কথা কাটাকাটি, মারামারি ও সংঘর্ষের মতো অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা।

বাকৃবি ছাত্রলীগের একটি অংশ দীর্ঘ দিন ধরে বর্তমান কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল। প্রায় পাঁচ বছর হলেও নতুন কমিটি না দেওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটির বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছে পদপ্রত্যাশীরা। এমনকি ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল-রঞ্জিত (কে.আর) মার্কেটে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়। পরে আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ক্যাম্পাসে গত পাঁচ বছরে মারামারি, নির্যাতন ও সহিংসতার মতো ঘটনাও দেখা দিয়েছে। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সে সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নিজেদের ওপর চড়াও হতেও দেখা গেছে। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়াজিত শোভাযাত্রায় অবস্থান করা নিয়ে সবুজ কাজী ও রুবেলের কিছু সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জেরে ওই দিন সন্ধ্যায় মারামারিতে ৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হন। 

১৭ মে ছাত্রফ্রন্টের এক নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দাবি পূরণ না করায় ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ে তালা ঝুলানো হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় শহীদ নাজমুল আহসান হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে হল ছাত্রলীগ নেতারা। 

একই বছর ৫ এপ্রিল ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের হামলায় ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়াও কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন হলের অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগের নির্যাতনের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

১ সেপ্টেম্বর রাতে বর্তমান কমিটির বিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মেলামেশার অভিযোগে শহীদ শামসুল হক হলের দ্বিতীয় বর্ষের চারজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে চলে যেতে বলেন কমিটির নেতারা। পরে বিপক্ষ গ্রুপের সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতারা বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাকৃবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, এক বছরের কমিটি পাঁচ বছর ধরে কোনোভাবেই থাকতে পারে না, যেটা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী। ষষ্ঠ বছরে একটি কমিটি পদার্পণ করছে এটি শুনতে মোটেও আমরা প্রস্তুত নই। কারণ এতে করে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে। গত পাঁচ বছরে এ কমিটির বেশিরভাগ সদস্য চাকরি ও বিয়ে করেছে। সে কারণে কমিটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর আগেও এ কমিটির বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা বলে আসলে সত্যিকার অর্থে নজর দেননি। আমরা আশা করছি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্রুত এ কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী তৈরি করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ২০১৯ সালে জুন মাসে সম্মেলন করার কথা থাকলেও করোনার কারণে সম্মেলনটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সম্মেলন দিয়ে নতুন কমিটি দিয়ে দেবো।

এদিকে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ ও বার্তা পাঠিয়েও জানার চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।

এসপি