বিশ্বের ৩১টি দেশের গবেষকদের নিয়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে অবস্থিত গ্রিন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে এ সম্মেলন শুরু হয়। 

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক তৃতীয় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের ৩১টি দেশের শতাধিক গবেষক ও অধ্যাপক অংশগ্রহণ করেন। 

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এ সময় আরও বক্তব্য দেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির, গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সজল কে দাস এবং সম্মেলনের অর্গানাইজিং চেয়ার (সভাপতি) অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ।
  
সম্মেলনে ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, শিল্প চ্যালেঞ্জ অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষক-গবেষকদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি দেশের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ব্যক্তিদের সমানতালে কাজ করতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলেই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এই বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। 

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, সুইডেন ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৩১টি দেশের শতাধিক গবেষক ও অধ্যাপক অংশ নিয়ে প্রযুক্তিবিষয়ক তাদের নানা মতামত উপস্থাপন করেন।

সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষিত ও তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে। তাদেরকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানদানের পাশাপাশি বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তুললেই এই বিপ্লবের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এ সময় তিনি তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে আইসিটি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপাদান তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, ইন্টারনেট অব থিংস ও ন্যানোপ্রযুক্তির মতো উদ্ভাবন যেমন আমাদের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের উদ্ভব ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন আকাশচুম্বী। তারপরও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনেক সম্ভাবনাময় অর্জন বাকি। টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে তবেই আগামীতে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাওয়া সম্ভব হবে। 

এই সম্মেলনকে শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্ড্রাস্ট্রি পার্সন ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যম বলে আখ্যায়িত করেন অর্গানাইজিং চেয়ার (সভাপতি) এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ। উদ্বোধনী বক্তব্যে সম্মেলনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
 
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রফেসর সজল কে দাস, আইইইই ফেলো ও সিঙ্গাপুরের রোলস রয়ছের ইলেক্ট্রিক্যালের প্রধান অমিত কে গুপ্ত, যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালযয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলের প্রফেসর মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, আইইইই ফেলো ও ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের তপন সাহা, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাচকাচুয়ানের প্রফেসর ড. চঞ্চল রায়, উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ঝি চেন এবং জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ড্রেসডেনের ড. ইঞ্জিনিয়ার মনিরুদ্দোজা আশির প্রবন্ধ পাঠ করেন।

মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া/আরএআর/জেএস