অনুষ্ঠিত হলো ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ১৪তম সমাবর্তন। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটরা অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। এবারের সমাবর্তনে মোট ১৯৬৬ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে ৩১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।   

সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক বিতরণ করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। অনুষ্ঠানে ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক বিতরণ করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।  

করোনা মহামারির এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সফলভাবে সমাবর্তন আয়োজনের জন্য ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে অভিনন্দন জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান চাকরির বাজারের জন্য আরও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে পাঠ্যক্রমের উন্নতিসাধনসহ শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং সফট স্কিলগুলোয় উন্নয়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে করোনা মহামারির বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থাকে মানিয়ে নিতে ব্যান্ডেড লার্নিং এবং মডিউলার এডুকেশনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়াও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সহানুভূতির অনুশীলন, সততা বজায় রেখে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা, মা-মাতৃভাষাসহ সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান ডা. দিপু মনি।    

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, পরিবর্তনশীল নতুন বিশ্বে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক পরিবর্তন, সামাজিক চুক্তিগুলোর পুনর্কল্পনা করা, স্থায়িত্ব এবং সমানুভূতির প্রতি গুরুত্বারোপ করা।

এছাড়াও ব্যতিক্রমী চিন্তার মানসিকতা গড়ে তোলা, একটি অর্থবহ জীবন পরিচালনা, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকা এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখতে গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

করোনা মহামারির মধ্যেও পড়াশোনায় প্রাণোচ্ছলতা ধরে রেখে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করায় গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং। তিনি বলেন, এই সমাবর্তনের মাধ্যমে তোমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি হলো সেই সঙ্গে এখন এর মাধ্যমেই তোমাদের লাইফলং লার্নিং এর যাত্রাও শুরু হলো।

এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের নিজেদের দক্ষতা ও পছন্দ অনুযায়ী কাজ করা, নিজেদের প্রতি সৎ থাকা, অন্যদের প্রতি দয়াবান ও অনুগ্রাহী হওয়া এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে জগৎ সম্পর্কে আরও কৌতূহলী হবার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে তবে দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের দেশ এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।

২০১৯ ও ২০২০ সালে টানা দুইবার বাংলাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা এবং করোনাকালে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নিজস্ব অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

সমাবর্তন বক্তা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘জ্ঞানই একটি দেশের প্রকৃত সম্পদ।’ গ্র্যাজুয়েটরা দেশের মূল্যবান সম্পদ। এরাই আমাদের দেশকে সমৃদ্ধশালী করেছে।

বড় স্বপ্ন দেখা ও প্রাণশক্তি ধরে রেখে ব্যর্থতা মেনে নিতে শিখতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে প্রথিতযশা এই লেখক বলেন, তুমি যদি জীবনে কখনও ব্যর্থ না হয়ে থাকো, তার অর্থ হলো তুমি নতুন কিছু করার চেষ্টা করো নি। করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রশংসা করেন তিনি।

আইএসএইচ