আসামি নজরুল ইসলাম

একটি হত্যা মামলা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘটর ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদুল হক (৩৫) ও তার সহকারী বাদল সরকার (২৫) খুন হন। এরশাদুলের প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম এই জোড়া খুনের ‘পরিকল্পনাকারী’ বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। 

নজরুল নাটঘর ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা আবু নাছিরের ছেলে। তবে ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ‘পরিকল্পনাকারী’ নজরুলকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

তবে এরশাদুলের ছোট ভাই ও জোড়া খুনের মামলার বাদী মো. আক্তারুজ্জামানের দাবি, মামলার বিরোধের জেরে জোড়া খুন হয়নি। মূলত এরশাদুল চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নজরুলকে ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কারণ তারা ভেবেছিলেন- এরশাদুল থাকলে তারা চেয়ারম্যান হতে পারবেন না।

ঘটনার পর নজরুলের সহযোগী আশরাফুল ইসলাম রাব্বীকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। রাব্বী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের কাজীপাড়া এলাকার মমিনুল ইসলামের ছেলে।

এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এরশাদুল হক ও তার সহকারী বাদল সরকার। এরশাদুল নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এরশাদুল নাটঘর ইউনিয়নের নান্দুরা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এবং বাদল সন্তোষ সরকারের ছেলে। হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন বাদল।

ঘটনার পর পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন এরশাদুলের চাচাতো ভাই সাইদুল্লাহ (৩০)। এ ঘটনায় নান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা আবু নাছির ও তার ছেলে নজরুল ইসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন এরশাদুল। আবু নাছির এবং এরশাদুলের বাড়ি পাশাপাশি। মামলা আপস করার কথা বলে আসামিদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৮০ লাখ টাকা নেন এরশাদুল। কিন্তু টাকা নিয়েও আপস না করে মামলা চালিয়ে যান এরশাদুল। ওই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয় নজরুলের বাবাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এরশাদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নজরুল।

পুলিশ আরও জানায়, জোড়া হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া রাব্বী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (১৭ ডিসেম্বর) রাব্বী এবং নজরুল পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে যান। প্রথমে এরশাদুলকে বহনকারী মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন রাব্বী। এরপর নজরুল তার মোটরসাইকেল থামিয়ে এরশাদুল ও বাদলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। হত্যাকাণ্ডের পরপরই রাব্বী ও নজরুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে চলে আসেন। এরপর তারা আলাদা হয়ে যান। পরে জেলার কসবা উপজেলা থেকে রাব্বীকে আটক করে পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরশাদুলের ছোট ভাই মো. আক্তারুজ্জামান ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চারজনের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে নাটঘর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রফিকুল ইসলাম রতনও আছেন। আরেকজনক শামীম আব্দুল্লাহ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালালেও তিনি নির্বাচন করেননি।

মামলা দায়েরের পর পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইতোমধ্যে ৫ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। বাকি ৪ জন কারাগারে আছেন। তবে হত্যকাণ্ডের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে পালিয়ে আসা নজরুলকে এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করেত পারেনি। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদী আক্তারুজ্জামান।

মামলার বাদী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, চাচাতো ভাইয়ের হত্যা মামলা আপস নিয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নজরুলকে ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। থানায় গিয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ বলে নজরুলকে ধরবে। কিন্তু তাকে ধরার ব্যাপারে পুলিশের কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না। সবকিছুই পুলিশের হাতে। পুলিশ যা প্রতিবেদন দেবে, আদালত সেটিই বিবেচনা করবে। মামলার আসামিরা নানাভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেবেন বলে জানান তিনি।

নবীনগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, রাব্বীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা গেছে হত্যা মামলার বিরোধের জেরেই এরশাদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নজরুল। তাকে ধরার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর