নগরকান্দা উপজেলার শহীদনগর ইউনিয়নের ছাগলদী গ্রামে আগুনে পুড়ে সায়েম নামের ১৪ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে

সন্তানের জন্মের পর প্রত্যেক মা-বাবার স্বপ্ন থাকে সন্তানকে ঘিরে। সন্তান কবে বাবা-মা বলে ডাকবে অপেক্ষায় কাটে দিন। সন্তানকে আদর, স্নেহ আর মমতা দিয়ে বড় করেন। মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা চালান। পথিমধ্যে যখন স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন দুঃখের শেষ থাকে না মা-বাবার। এমনই এক হতভাগ্য মা-বাবার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

যে হাত দিয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কথা, ঠিক সে হাত দিয়েই সন্তানকে কবরে শোয়াতে হয়েছে। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ছাগলদী গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।

নগরকান্দা উপজেলার শহীদনগর ইউনিয়নের ছাগলদী গ্রামে আগুনে পুড়ে সায়েম নামের ১৪ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। শিশু সায়েম ওই গ্রামের সাইফুল মাতব্বরের ছেলে। শিশু সায়েম দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট।

জানা গেছে, দুপুরে শিশু সায়েমের মা মর্জিনা বেগম রান্না করছিলেন। এ সময় পানির প্রয়োজন হলে শিশু সায়েমকে রান্না ঘরে বসিয়ে মা পাশের কুমার নদে পানি আনতে যান। পানি আনতে যাওয়ার পর হঠাৎ রান্না ঘরে আগুন লেগে যায়। মর্জিনা বেগম বাড়িতে এসে দেখেন রান্নাঘর জ্বলছে। তার চিৎকারে এলাকাবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এরই মধ্যে আগুনে জীবন প্রদীপ নিভে যায় সায়েমের।

শিশু সায়েমকে হারিয়ে মা মর্জিনা বেগম পাগলপ্রায়। তার কান্না থামছেই না। কান্না করছেন আর বলছেন, আমি কেন পানি আনতে গেলাম। পানি আনতে না গেলে আমার কলিজার টুকরার কিছু হত না। আল্লাহ তার বদলে আমাকে নিয়ে যেতেন। আমার কলিজার টুকরাকে কেড়ে নিল আগুন।

সায়েমের দাদা শাহাদাৎ শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আল্লাহ তারে নিয়ে গেলেন। 

সায়েমের বাবা সাইফুল মাতব্বর অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘটনার সময় তিনি অন্যের জমিতে কাজ করছিলেন। সংবাদ পেয়ে বাড়িতে ছুটে আসেন। 

সাইফুল মাতব্বর বলেন, আমার দুই ছেলে। একজনের বয়স তিন বছর, আরেক জনের বয়স ১৪ মাস। খুব স্বপ্ন দেখতাম, তার মুখে বাবা ডাক শুনব। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হলো না। সায়েম জন্ম নেওয়ার পরেই ভেবেছি, লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

শহীদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। তারপরও মেনে নিতে হয়। সংবাদ পেয়ে ওই বাড়িতে গেছি, তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। 

বি কে সিকদার সজল/এএম