তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া। প্রতি বছর বন্যা আর নদীভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে বসতভিটা আর ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বারবার হিমশিম খেতে হয় হতদরিদ্র কৃষকদের। জীবনমানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে অর্থাভাবে থমকে যাচ্ছে কারো কারো স্বপ্ন। 

এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত গঙ্গাচড়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এখনো কমেনি হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের সংখ্যা। এ কারণে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলার নবাগত ইউএনও এরশাদ উদ্দিন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই নিজ কার্যালয়ে মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপন করেছেন। উদ্দেশ্য অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষদের পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। এজন্য সমাজের বিত্তবানসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা বক্সে টাকা ফেলতে উৎসাহিত করছেন। কখনো আবার নিজে থেকেই মানবিক সহায়তার জন্য ২ টাকা করে চেয়েও নিচ্ছেন। অবশ্য সবাই খুশি হয়ে বক্সে সহায়তার অর্থ দিচ্ছেন। 

ইউএনওর মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, এই মানবিক সহায়তা বক্সে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সমাজের অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ উপকৃত হবেন।‌

স্থানীয় সংগঠক আব্দুল বারী স্বপন বলেন, হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলেও অনেকে এ সুবিধার বাইরে থেকে যায়। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সব সময় সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু অনেক হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী সহায়তার জন্য বিভিন্ন সময়ে ইউএনওর কার্যালয়ে আসেন। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউএনওর মানবিক সহায়তা বক্স নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।

গঙ্গাচড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম বলেন, ইউএনও যোগদান করে প্রথমেই তার কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত চেয়ারের ব্যবস্থা করে আমাদের সম্মানিত করেছেন। সঙ্গে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র, অসহায়, দুস্থ মানুষদের জন্য তার মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের বিষয়টি ব্যতিক্রম এবং প্রশংসনীয়। 

সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সুশীল সমাজের যারাই বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউএনওর কার্যালয়ে আসছেন, তাদের নজর কাড়ছে মানবিক সহায়তার জন্য বক্সটি। অনেকেই বক্সে সহায়তার অর্থ দিয়ে প্রশান্তির হাসি নিয়ে ফিরছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন জানান, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি সেই বোধ থেকে আমার কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া অনেক হতদরিদ্র পরিবার এবং মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়ার জন্য সহায়তা চাইতে আসে। আমি চেষ্টা করি ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে। তবে মানবিক সহায়তা বক্স স্থাপনের মাধ্যমে সবার সহযোগিতায় আরও বেশি মানুষকে সহযোগিতা করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, মানবিক সহায়তা বক্সে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে আর্থিকসহায়তা গ্রহণ করা হবে। যে যার সাধ্যমতো বক্সে আর্থিক সহায়তা করতে পারেন। এই মানবিক সহায়তা বক্সে প্রাপ্ত অর্থ থেকে উপজেলার অসহায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে থাকলে অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচার আশা জাগ্রত হবে। তিনি উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি