সাধারণত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মানেই নোংরা পরিবেশ, অপরিষ্কার বাথরুম, রোগীদের ময়লা বেড, অমানবিক সেবা ও রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। মানুষের এমন বদ্ধমূল ধারণা স্বাভাবিক। কিন্তু ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সাধারণের চোখ আটকে থাকে দৃষ্টিনন্দন কিছু বিষয়ের দিকে। হাসপাতালের বাইরে থেকে যতটা না পরিচ্ছন্ন, ভেতরে ঢুকলে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় কিছু বিষয়ের ওপর। ভেতরে ঢুকলে মনে হয় কোনো গ্যালারিতে প্রবেশ ঘটেছে।

জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই আমূল পরিবর্তন। হাসপাতালটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে চিত্রিত করা হয়েছে নানা দৃশ্যকল্পের। হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে টাঙানো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি, বসার জন্য রয়েছে ভিআইপি আসন। আগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও এখন আর দাঁড়াতে হয় না। প্রতিটি জায়গাতেই রয়েছে ভিন্নতা। এ যেন বেসরকারি হাসপাতালের ছোঁয়া।

প্রধান ফটক রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আব্দুর রাজ্জাকের প্রতিকৃতী। এ ছাড়া অভ্যর্থনার পাশে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে কোট করে দেয়ালিকা। দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ দিনের চিত্র। রয়েছে উন্নত মানের চেয়ার। কোনায় কোনায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢুকতেই সু-উচ্চ বিশাল দৃষ্টিনন্দন ভবন। ভেতরে ঢোকার সড়কের পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আধুনিক শরীয়তপুরের রূপকার আব্দুর রাজ্জাকের ম্যুরাল। কিছুটা এগোলে দেয়ালে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাকের ছবি টাঙানো। নিচে রাজ্জাক-তনয় ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের ছবি। এ ছাড়া উপজেলার সিটিজেন চার্টার। 

হাসপাতালের দেয়ালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ছবি, হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত দিবসের ছবি, বঙ্গবন্ধুর বিশেষ ভাষণের কিছু অংশ, রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। এ ছাড়া সুসজ্জিত অভ্যর্থনা কেন্দ্র। তার পাশেই রয়েছে উন্নত মানের বসার চেয়ার। হাসপাতালজুড়ে রয়েছে টবে লাগানো শোভাবর্ধনকারী দেশি-বিদেশি হরেক রকম ঔষধি গাছের চারা। পুরো হাসপাতালটি রয়েছে সিসি ক্যামেরা আওতায়।

শুধু সৌন্দর্যবর্ধনেই নয়, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার মানও সাধারণ ও গরিব রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত। এখানে রয়েছেন পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স। এ ছাড়া ডিজিটালাইজেন প্রক্রিয়ায় রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা সরকারি আব্দুর রাজ্জাক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদা হাসান বলেন, আমি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আসার পর হাসপাতালের চিত্র দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। সরকারি হাসপাতাল এমন হতে পারে, আমার ধারণা ছিল না। আগের থেকে সৌন্দর্য বেড়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে হাসপাতাল। ঔষধি গাছ রয়েছে, সঙ্গে এগুলোর নামও দেওয়া আছে। বড় কথা হলো, আমরা হাসপাতালে আসি চিকিৎসা নিতে। রোগীর সঙ্গে আসা শিশুরা দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের লেখাগুলো পড়ে। এতে তারা জানতে পারছে, শিখতে পারছে। এই হাসপাতালে এলে মনটা জুড়িয়ে যায়।

চিকিৎসা নিতে আসা হিমেল শিকদার বলেন, হাসপাতালটি এলে মনে হয় কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এসেছি। আগে হাসপাতালে শৃঙ্খলা ছিল না। এখন সুশৃঙ্খলভাবে ডাক্তার দেখানো যাচ্ছে। হাসপাতালে ঢুকলে শরীরে একটা প্রশান্তি চলে আসে। মাঝেমধ্যেই দেখি অনেকেই বঙ্গবন্ধু কর্নারে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, তাকে দেখছেন।

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, এটি সৌন্দর্যবর্ধিত হাসপাতাল। আমার জানামতে এমন সরকারি হাসপাতাল আর কোথাও নেই। উন্নত পরিবেশ পেলে রোগীদের অসুস্থতা কমে যায়। এই পরিবেশ ও সেবার কারণে রোগীর পরিমাণ বেড়েছে। আমরা ডাক্তাররাও অনেক ভালো সেবা দিতে চেষ্টা করছি। রোগীরাও নিয়ম মেনে হাসপাতালে সেবার জন্য আসছে। উন্নত চিকিৎসা ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাররক্ষক বাবুল আক্তার বলেন, হাসপাতালের সৌন্দর্যবর্ধনের একটি পরিকল্পনা করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এটি করার জন্য সহযোগিতা করেন। এখানে নিয়ম অনুযায়ী সেবা পায় এবং পাবে সেবাগ্রহীতারা।

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা খোকন বলেন, মজিব বর্ষের একটি স্লোগান ছিল স্বাস্থ্য খাতের ‘মুজিব বর্ষের স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’। এই স্লোগানের মাধ্যমে আমরা একটি পরিকল্পনা করি কীভাবে এই হাসপাতালের পরিবর্তন আনা যায়। একটা সময় হাসপাতালে ভালো কোনো চেয়ার-টেবিল ছিল না। ডাক্তারদের রুমের অবস্থাও একদম ছিল সাদামাটা। রোগীদের বসার জন্য চেয়ায় ছিল না। আমরা পরিকল্পনা করি হাসপাতালে একটি মুজিব কর্নার আর উন্নত মানের চেয়ারের ব্যবস্থা করব। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমার সঙ্গে একমত হন।

পরে তিনি বলেন যে পুরো হাসপাতালটিকে অটোমোশনে নিয়ে যাবেন, যাতে উন্নত মানের চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন সেবার কাজ শুরু করতে পারেন। তিনি হাসপাতালের ডিজাইন করিয়ে নেন। কয়েক দিনের চেষ্টায় হাসপাতালটি দৃষ্টিনন্দিত ও সুসজ্জিত হাসপাতালে পরিণত হয়।

রোগীদের সেবা বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতাল ডিজিটালাইজ করার জন্য প্রত্যেক রোগীকে ডিজিটাল কার্ড দেবেন, যাতে রোগীর আগের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা কী ছিল, তা কম্পিউটারের মাধ্যমে জানা যাবে। রোগীর সেবার জন্য টিকিট সিস্টেমে নেওয়া হবে। তারা টিকিট কেটে বসার পর কম্পিউটারের মাধ্যমে তাদের ডাকা হবে। এরপর ওই কার্ডে তার সব সেবার তথ্য এন্ট্রি করে দেওয়া হবে। এতে চিকিৎসাকরা দ্রুত জানতে পারবেন তার বর্তমান অবস্থা কী এবং কী কী ওষুধ খেয়েছে রোগী।

শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আমরা আইডি সিস্টেম দেখি। এতে রোগীর সব ডাটা পাওয়া যায়। আমরা এই হাসপাতালে রোগীদের এ রকম একটি আইডি কার্ড করে দেব যাতে রোগীরা দ্রুত সেবা পেতে পারে। পুরো হাসপাতালটি অটোমোশনের আওতায় নিয়ে আসব। এটি করার জন্য আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন।

এনএ