সংসার চালাতে বিক্রি করেছেন রক্ত, নাসিমার অধীনে কাজ করে ৬০ কর্মী
বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে স্বামীকে হারান। চার ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। সন্তানদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারতেন না। অভাবে সংসারে তাদের চাহিদা মিটাতে বিক্রি করেছেন শরীরের রক্ত। এখন তিনি চারটি দর্জি দোকানের মালিক। এসব দোকানে কাজ করছেন ৬০ জন।
বলছিলাম কুমিল্লা মহানগরীর মনোহরপুর হাজী প্লাজার জুলি লেডিস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী নাসিমা খনমের কথা। ঢাকা পোস্টকে শুনিয়েছেন নিজের ভাগ্য বদলের গল্প।
বিজ্ঞাপন
নাসিমা খনম বলেন, ১৯৮৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বিয়ে হয়। ১৯৮৮ সালে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় আমার স্বামীকে। এর মধ্যে তিন ছেলের জন্ম হয়। আরেক ছেলে গর্ভে ছিল। সন্তানদের খাবার জোটাতে দিশাহারা হয়ে পড়ি। এক ছেলে মাংস খেতে চেয়েছিল। তখন টাকা না থাকায় রক্ত বিক্রি করেছি। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি রক্ত বিক্রি করে।
১৯৯১ সালে এক খালার সহযোগিতায় যুব উন্নয়নের সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি হই। ছোট ভাইয়ের সহযোগিতায় নগরীর হাউজিংয়ে ছোট একটি রুম ভাড়া করে সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করি। প্রথমে কেউ সেলাইয়ের কাজ দিত না। বাসায় বাসায় গিয়ে কাজ নিতাম। এভাবে কাজ করে ৫০-১০০ টাকা যা আয় হতো সেটা দিয়ে চাল-ডাল কিনতাম। বাসার মালিক ছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা। তার পরামর্শে দোকান নেওয়ার পরিকল্পনা করি।
বিজ্ঞাপন
প্রথমে বিষয়টি লজ্জাজনক মনে হলেও ১৯৯১ সালে টাকা ধার নিয়ে কুমিল্লা নিউ মার্কেটে দোকান ভাড়া করি। ছেলেরা আমাকে সহযোগিতা করত। ব্যবসা শুরুর পর আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আল্লাহর রহমতে এখন চারটি দোকানের মালিক।এক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আর তিন ছেলে তিন দোকানের দায়িত্বে আছে।
ইতোমধ্যে আমার দোকান থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ কাজ শিখেছে। তারা এখন নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। ২০০১ সালে সেলাই প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগে সেরা হয়েছি। বর্তমানে পাঁচটি সার্টিফিকেট রয়েছে।
নিলুফা ইয়াসমিন নামে এক কাস্টমার বলেন, আমি স্কুলে থাকতে এই আপুকে দিয়ে পরিবারের সবার জামা সেলাই করাতাম। আমার বিয়ে-সন্তান হয়েছে। এখনও আপুর কাছেই আসি। নারীদের কাছে সেলাই কাজের বিষয়ে মন খুলে কথা বলা যায়। উনার কাজও খুব ভালো।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জুলি লেডিস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী নাসিমা খনম বলেন, আন্তরিক ব্যবহার, ধৈর্য ও সততা দিয়ে ব্যবসা করে মানুষের মন জয় করেছি। কষ্ট করে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চললে সফলতা আসবেই। আমার শ্বশুরবাড়িতে বিধবা ও দুঃস্থ নারীদের প্রশিক্ষণে জন্য একটি প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে। যেখানে নারীরা কাজ করে স্বাবলম্বী হবেন।
এসপি