সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দাপট ও নিজের প্রভাব খাটিয়ে দেশে বিদেশে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) জামাল পাশা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তিনি। জামাল পাশা বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী ও ফরিদপুর ৩ আসনের বর্তমান সাংসদের ছোট ভাই দুই হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর (৬৭)। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি দলীয় ক্ষমতা এবং তার ভাইয়ের ক্ষমতাসহ সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফরিদপুরে সকল টেন্ডার থেকে কমিশন এবং চাকরি বাণিজ্য করে দেশে বিদেশে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সালে ফরিদপুরে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে তার ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী হাতুড়ি বাহিনী এবং হেলমেট বাহিনী আত্মগোপনে চলে যায়।

এরপর ২০২০ সালের ২৬ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪(২) ধারায় মামলা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাফরুল থানায়। সেই মামলার তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার (বাবর) বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।  তখন থেকেই তিনি (বাবর) পলাতক ছিলেন। এরপর বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গতকাল সোমবার (৭ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকার ভাটারা থানার বসুন্ধারা আবাসিক এলাকা হতে বাবরকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর জেলা পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে ফরিদপুরে নিয়ে আসা হয়।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোহতেসাম হোসেন বাবরকে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর সদরের গোয়ালকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল হোসেনের ছেলে খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর। তার বড় ভাই খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী। ২০২১ সালের ৩ মার্চ ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় মোহতেসাম হোসেন বাবরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তার ছোট ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রীর এপিএস এএইচএম ফুয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাহিম, যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ডেভিড, মোহাম্মদ আলী দিদার ও তারিকুল ইসলাম নাসিম।

জহির হোসেন/এমএএস