রংপুরের মিঠাপুকুরে সপ্তম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পায়রাবন্দ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুস ছালাম ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভোট পুনরায় গণনার ব্যবস্থা করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দুইবার নির্বাচিত সাবেক এই ইউপি সদস্য। 

দাবি আদায়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরে রংপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেন আব্দুস ছালাম। এর আগে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন পায়রাবন্দের ৮ নম্বর ওয়ার্ডবাসী।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই সব প্রার্থীর পক্ষে থাকা পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর নেন দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাছিবুর রহমান। পরে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকের ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুস ছালামের ৯৬টি ভোট বাতিল করেন। বাতিল দেখানো ব্যালেটগুলোর মধ্যে ৮২টিতে বৈদ্যুতিক পাখায় সিল ছিল এবং এর বেশির ভাগই কলম দিয়ে ফুটো করা ছিল। পরে কৌশলে তৃতীয় অবস্থানে থাকা মোরগ প্রতীকের প্রার্থীকে তিনি বিজয়ী ঘোষণা করেন।

ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাছিবুর রহমান নিজে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেন পরাজিত প্রার্থী আব্দুস ছালাম। সাবেক এই ইউপি সদস্য বলেন, কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক হাছিবুর রহমান আমার অপর প্রতিদ্বন্দ্বী বাদশা মিয়ার (মোরগ প্রতীক) প্ররোচণায় ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কৌশলে বাহিরাগত দুইজন  লোককে সংযুক্ত করনে। বিষয়টি নিয়ে সব প্রার্থী ও ভোটাররা প্রতিবাদ করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কারও কথা শোনেননি।

একপর্যায়ে ভোট গণনা কক্ষ থেকে আমার পোলিং এজেন্ট নুরুল ইসলামকে বের করে দিয়ে নামাজের বিরতি দিয়ে ভোট গণনা বন্ধ রাখেন। ওই পর্যন্ত আমার বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে গণনা অনুযায়ী প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮০২। পরে আবার আমার পোলিং এজেন্টসহ অন্যান্যদের ভেতরে নিয়ে ভোট গণনার নামে প্রহসন করেন। নামাজের বিরতির আগে গণনায় যেখানে ৮০২ ভোট ছিল, পরে তা কীভাবে ৬০২ হলো?

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মোরগ প্রতীকের প্রার্থী বাদশা মিয়াকে ৬১৮ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ভোট দেখানো হয়েছে ৬০২। কারচুপির মাধ্যমে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আমি পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলে আমাকে হতাশ করেছেন। মিঠাপুকুরে নিবার্চন কর্মকর্তারা ভোট নিয়ে কারচুপি-দুর্নীতি করলেও এর দায় সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা ওই প্রার্থীর আবেদন পেয়েছি। কিন্তু ভোট পুনরায় গণনার সিদ্ধান্ত আমরা দিতে পারি না। এটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। অভিযোগকারীকে নির্বাচন কমিশনের ট্রাইব্যুনালে গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।  

উল্লেখ্য, মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে এক প্রার্থীকে জয়ী করতে গোপন চুক্তির মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘ভোটে জেতাতে নির্বাচন কর্মকর্তার গোপন চুক্তির অডিও ফাঁস’ শিরোনামে নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশে ওই কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজড দেওয়া হয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর