ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪ নং রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থীর ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভোট-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪৫০ জনের নামে গত ২৭ ডিসেম্বর রুহিয়া থানায় মামলা করেন প্রিসাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ। ফলে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে আসাননগরসহ ছয়টি গ্রাম।

গতকাল শুক্রবার (১১ মার্চ) পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে সহিংসতার ঘটনায় মামলা করার পর এলাকায় গ্রেপ্তার-আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

সরেজমিনে গ্রামে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে তেমন মানুষের জনসমাগম নেই। এলাকার পুরুষরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের ভয়ে। বাড়িঘরে নারী আর শিশুরা অজানা আতঙ্কে সময় পার করছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসানগর কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে সদস্য পদে মাসুদ রানা তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহ আলমের চেয়ে ১০২ ভোট বেশি পান। কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করেন শাহ আলমের কর্মী-সমর্থকরা। পরে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং কেন্দ্রে হামলা চালান। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে। হামলাকারীরা আক্রমণে পুলিশ ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে হামিদুর রহমান (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হন আহাদুল (৩২) নামের আরেকজন।

আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা আফরোজা খানম বলেন, ভোটের দিন মারামারি ঘটনায় আমার বাবাসহ গ্রামের অনেক মানুষের নামে মামলা করেছে পুলিশ। ফলে গ্রামে আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজিন ছাড়া গ্রামের সব পুরুষ আত্মগোপনে গেছেন। বর্তমানে আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।

একই গ্রামের শিল্পী বেগম বলেন, মারামারির সময় আমার স্বামী বাড়িতেই ছিল না। তারপরও আমার স্বামীর নামে মামলা হয়েছে। আজ দুই মাস ধরে আমার স্বামী বাড়িতে নাই। ঘরে খাবার নাই। ১০ মাস বয়সী ছেলেটাকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। অন্যের বাড়িতে থেকে খাবার খুঁজে এনে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছি।

স্কুলশিক্ষার্থী তৃষা বলে, আমার বাবা একজন দিনমজুর। সারা দিন মাঠে কাজ করে রাতে বাড়িতে আসে। কিন্তু আমার নির্দোষ বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা তিন বোন পুলিশের পা ধরে বলেছি যে আমার বাবা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ আমাদের গালিগালাজ করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। একদিন কাজ না করলে আমাদের চুলায় আগুল জ্বলে না। আজ ১১ দিন খুব কষ্টে আছি আমরা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তৃষা।

রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শহিদুর রহমান বলেন, অভিযোগে প্রিসাইডিং অফিসার তৌকির আহম্মেদ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

এম এ সামাদ/এনএ