নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী। এ নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়। আর এসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন রিফাত আহমেদ রাসেল নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ বিপন্নের কথা উল্লেখ করে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দেন ওই সাংবাদিক। 

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন আলাল সাংবাদিক রিফাতকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। হুমকির পর ওই সাংবাদিকের বাসার গেট ও একটি দোকানের শার্টারেও হামলা করেছে কিছু দুষ্কৃতকারী।

এ ঘটনার প্রতিবাদ ও পৌর মেয়র আলাউদ্দিন আলালের বিচার দাবিতে শনিবার (১২ মার্চ) মানববন্ধন, সমাবেশ এবং প্রতীকী সড়ক অবরোধ করেছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। 

জেলা শহরের মোক্তারপাড়া সড়কে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এসব কর্মসূচিতে নেত্রকোনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম মুখলেছুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, সাংবাদিক খলিলুর রহমান শেখ, মাহফুজ স্বপন, সঞ্জয় সরকার, ভজন দাশ, কামাল হোসাইন, আলপনা বেগম, ইউরো আনিস, পল্লব চক্রবর্তী, সোহান আহমেদ কাকন, আমিনুল ইসলাম মনি প্রমুখ। 

সমাবেশের পর সাংবাদিকরা সড়কের মাঝখানে বসে প্রতীকী সড়ক অবরোধ করেন এবং স্লোগান দেন। 

এর আগে পৌর মেয়রের হুমকির ঘটনায় শুক্রবার (১১ মার্চ) দুপুরে পরিবার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা দাবি করে দুর্গাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাংবাদিক রিফাত আহমেদ রাসেল। 

দুর্গাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহবুবুর রহমান জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তার অভিযোগটি পেয়েছি। তবে তার বাসার সামনে কে বা কারা গিয়েছিল তা জানতে পারিনি।

সাংবাদিক রিফাত দুর্গাপুর পৌরসভার তেরিবাজার এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি একাত্তর টেলিভিশন ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর দুর্গাপুর উপজেলা প্রতিনিধি।

সাংবাদিক রিফাত জানান, সোমেশ্বরী নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন নিয়ে সম্প্রতি তিনি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। গত বুধবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে সোমেশ্বরী নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে নির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ না করলেও স্ট্যাটাটিকে কেন্দ্র করে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন বালু ব্যবসায় জড়িত দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন আলাল। পরে সেদিন সন্ধ্যায়ই রিফাতকে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। ওই সময় ধারণ করা ৯ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে। 

রেকর্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেয়র আলাল সাংবাদিক রিফাতকে অসংখ্যবার অকথ্য ভাষায় গালাগাল, হত্যার হুমকিসহ এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। 

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেও মেয়র আলাল ও তার লোকেরা সাংবাদিক রিফাতের বাবা রফিকুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে কথাবার্তা বলেন এবং রিফাতকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে তাদের সামনে হাজির করতে বলেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাত ৪টার দিকে রিফাতের বাসার সামনের দুটি দোকান এবং বাসার গেটেও হামলা করে কিছু দুষ্কৃতকারী। তখনও তারা রিফাত এবং তার বাবাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। 

দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন আলাল বলেন, রিফাতের ও আমার বাসা খুব কাছাকাছি। তার বাবার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার বাবার উপস্থিতিতেই তাকে ডেকে এনে কিছুটা শাসন করেছি। তাকে শাসন করার সামাজিক অধিকার আমার আছে। তাছাড়া তার বাবার সামনেই রিফাত ভুল স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরাও বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রিফাতের বাসার গেটে আমার কোনো লোক হামলা করেনি। শুনেছি রাতে কিছু মদখোর লোক সেখানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। এরা কেউ আমার লোক বা কর্মচারী নন। তবে রিফাত এর আগেও তাকে নিয়ে একাধিকবার লেখালেখি করেছে বলে জানান মেয়র আলাল।

জিয়াউর রহমান/আরএআর