যশোর-২ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের ও বাসারের চামড়া তুলে নিতে চাইলেন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল হকের অফিসে এ ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতার মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমপির এমন আচরণে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালন এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নিয়ে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান আলী, ফিল কমান্ডার আব্দুস ছাত্তার, আব্দুল কাদের, আব্দুর রাজ্জাক, যোদ্ধাহত ইলিয়াস উদ্দিন, যোদ্ধাহত আলাউদ্দিন, মোর্শেদ আলী, আবুল বাসার, আব্দুর রবসহ মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে আলোচনায় বসেন।

আলোচনা সভা শেষে হলে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অব. ডা. নাসির উদ্দিন ইউএনওর অফিসে ঢুকে বলতে থাকেন, আব্দুল কাদের কই? ওর চামড়া তুলে দেব। বাসার কই? ওরেও চামড়া তুলে দেব। আমার এই চেহারা দেখেছে, ওরা আমার আসল রূপ এখনো দেখেনি। মুছা কমিটিতে নাম দিয়েছে বলে গা গরম হয়ে গেছে! 

মহান স্বাধীনতার মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমপি নাসির উদ্দিনের এমন আচরণে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এমন আচরণের মাধ্যমে সব মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে বলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা মন্তব্য করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শাহজাহান আলী অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সকালে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে বঙ্গবন্ধু জন্মদিন ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে সভা করে ইউএনও মাহবুবুর হক। 

ইউএনও মহোদয়ের মিটিং শেষ হওয়ার পরপরেই ওই মিটিংয়ে উপস্থিত হন ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন। এসেই মুক্তিযোদ্ধা কাদের কই, বাশার কই, তোদের চামড়া তুলে নেব। তখনই মুক্তিযোদ্ধা কাদের প্রতিবাদ জানিয়ে এমপিকে বলেন, আমরা কি করেছি এমপি মহোদয়। আমাদের দোষ কি? প্রতিউত্তরে এমপি বলেন, মুছা মাহমুদ (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তোমাদের মুক্তিযোদ্ধা কমিটি পাস করে এনেছে বলে খুব সাহস বেড়ে গেছে। মেরে সব টানটান করে দেব! আমার বাইরের রুপ দেখেছো, ভেতরের রুপ দেখনি। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজ আমাদের (মুক্তিযোদ্ধা) চামড়া তুলে নেওয়ার জন্য। আমাদের লাঞ্ছনা করার প্রতিবাদে সকল মুক্তিযোদ্ধা সিন্ধান্ত নিয়েছি এমপি মহোদয়ের কোনো অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত হবো না। এমনকি আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, আন্দোলন এবং সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। 
 
একটি সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি এমপি নাসির গ্রুপ আর একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদের গ্রুপে বিভক্ত। দুটি গ্রুপের সঙ্গে উপজেলায় দুটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপও রয়েছে। 

২০১৭ সালে যাচাই বাচাইয়ে ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যায়। সেই তালিকা থেকে কয়েকজনের নাম প্রস্তাব পাঠিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৯ সালের দিকে এমপি নাসির কয়েকজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আনলে ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বিভক্ত সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেন এমপি নাসিরের কাছে লাঞ্ছিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাশার। 

এমপি নাসির প্রকাশ্যে ঝিকরগাছা ইউএনওর সামনে চামড়া তুলে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এমপি নাসির সংসদ সদস্য হওয়ার পরে ভুয়া মুক্তযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং বির্তকিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত এমপির অনুসারী লিয়াকত হোসেনকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার করার পাঁয়তারা করে আসছিল। সংসদের এসব কর্মকাণ্ড আমি ও মুক্তিযোদ্ধা কাদের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। 

সেই ক্ষোভ থেকেই মঙ্গলবার আমাদের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের চামড়া তুলে নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি অতি রঞ্চিতভাবে বলছে। এমপি মহোদয় কিছুটা ক্ষোভে স্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তবে চামড়া তুলে নেওয়ার কথা বলেননি। 

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে দুইবার এ প্রতিবেদক কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়টি নিয়ে তাকে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জাহিদ/ওএফ