মাদারীপুরের রাজৈরে সরকারি খাল মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের গঙ্গাবর্দী গ্রামে কুমার নদের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সরকারি খালে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছে একটি প্রভাবশালী মহল। এর ফলে সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি খালের দু'পাড়ের জমিতে সেচের পানি সরবরাহেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হালিম ফকির নিজ উদ্যোগে রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। খালের অপর প্রান্তে ২০ থেকে ২৫টি বাড়ির লোকজনের জন্য খালটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন এই নেতা। অথচ কয়েকশ মানুষ পানি নিষ্কাশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

রাস্তা নির্মাণের জন্য বেশি মাটি কাটা হয়েছে জালাল ফকির নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। মাটি কাটার ফলে জালাল ফকিরের বাড়িটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারটি। বর্ষার মৌসুম শুরু হলেই ওইসব বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আশপাশের লোকজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জালাল ফকিরের স্ত্রী বলেন, মাটি কেটে রাস্তা বানাইছে হালিম ফকির ও সান্টু খালাসি। সামনে হালিম ফকির চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে। ভোট লাগবে, সেজন্য রাস্তা বানাইয়া সবাইরে দেহায়। ক্ষতি তো হইলো আমাগো। বাড়ি ভাইঙা পড়বে আমার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, খালের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় পানি যাওয়া আসা বন্ধ রয়েছে। পানির অভাবে আগামী বছর ধান, পাটের ফলন ভালো হবে না। সরকারি খাল সরকার কাটছে। তারা খাল ভরে রাস্তা করার কে? সরকার কত ব্রিজ করে। এখানে ব্রিজ করলেই তো হয়? আমাদের বিপদে ফেলে রাস্তা করার কী দরকার? সে তো থাকে ভালো জায়গায়। তার টাকা আছে, ক্ষমতা আছে। খালের দরকার তার না থাকলেও আমাদের আছে। সরকার বিষয়টি নজরে আনলে সব সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চাই সমস্যাটির সমাধান হোক।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ০.৬৪০ কি.মি. খালটি খনন করে কুমার নদের সঙ্গে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই খালের উপর সম্প্রতি মাটি দিয়ে ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। রাখা হয়নি পানি প্রবাহের জন্য কোনো ব্যবস্থা। যার ফলে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন, জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হালিম ফকির বলেন, আমরা খাল ভরাট করিনি। কে বা কারা করেছে আমি জানি না।

বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমার ইউনিয়নে যথেষ্ঠ উন্নয়ন হয়েছে। ওই জায়গায় ব্রিজের জন্য প্রস্তাব পাঠাতাম। কারা খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করেছে সেটা আমি জানি না। তবে যারা সরকারি সম্পদ নষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমি উপজেলায় বিষয়টি জানাব। তবে আমি মনে করি, খালের পানি প্রবাহ না হলে ওই এলাকার কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

খাল খননের বিষয়টি আমরা দেখি। কিন্তু খাল রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।

পার্থ প্রতিম সাহা, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, সরকারি খাল দখল করা বা তার উপর রাস্তা নির্মাণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ এমন কিছু করে থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাজমুল মোড়ল/এসপি