পর্যাপ্ত ফেরি থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে যানবাহনের চাপ অব্যাহত রয়েছে। প্রায়ই ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ৪ থেকে ৮ কিলোমিটারের বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। লাগাতার যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকা চালক ও যাত্রীদের। 

ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০টি ফেরি দিয়ে নিয়মিত যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। যার মধ্যে রো রো ফেরি ১১টি, ইউটিলিটি ৬টি, টানা (ডাম্প) দুটি ও কে টাইপ একটি ফেরি চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দু-একটি ফেরি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। এছাড়াও ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ৪টি ফেরিঘাট (৩, ৪, ৫ ও ৭) দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে ১ ও ২ নম্বর ঘাট আগেই বন্ধ ছিল। 

নতুন করে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ৬ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ। সচল থাকা ঘাটগুলোর মধ্যে দু-একটি ঘাট বিভিন্ন কারণে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বর্তমানে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ফেরিঘাটের ছোট পথগুলো নিচু হয়ে গেছে। ফলে যানবাহন লোড-আনলোডে সময় বেশি লাগছে। দৌলতদিয়া প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৪৬২টি ফেরির ট্রিপ দৌলতদিয়া থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া গেছে। যার মধ্যে বাস ১৩৪৫টি, ট্রাক ২৮৮১টি, ছোট যানবাহন ৩৪৪৭টি মিলিয়ে মোট ৭৬৭৩টি যানবাহন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে পার হয়ে পাটুরিয়া গেছে। 

সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার সারি তৈরি হয়েছে। তবে এ যানজটে যাত্রীবাহী বাসের তেমন সারি ছিল না। দীর্ঘ সময় মহাসড়কে অপেক্ষা করা ট্রাকচালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে অলস সময় পার করেছেন। প্রচণ্ড রোদে ভ্যাপসা গরমের কারণে ট্রাকচালকরা ট্রাকে বসে থাকতে না পারে আশপাশে ছায়ায় বসে সময় কাটাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ট্রাকচালক আক্কাচ আলী বলেন,দৌলতদিয়া ঘাট মানেই ভোগান্তি। মাঝে মধ্যে হঠাৎ ঘাট স্বাভাবিক থাকলেও বছর জুড়েই এই ঘাটে অতিরিক্ত চাপ থাকে। ফলে দেশের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা যানবাহনের চালকদের মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করা উচিত। তাহলে আমরা স্বস্তি পাব। আর ভোগান্তি পোহাতে হবেনা। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোগান্তি ও যানজট কমাতে আমরা সর্বক্ষণ কাজ করছি। সংযোগ সড়কের ব্যাপারটা বিআইডব্লিউটিএর ইঞ্জিনিয়ার শাখাকে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

তিনি আরও বলেন, ঘাটে এখন ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে সপ্তাহ খানেক ধরে  অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘাটের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করা আছে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।

মীর সামসুজ্জামান/আরএআর