শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর এবার জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ উঠেছে ভোলা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়ম অনুসারে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করতে দেখা গেছে ভোলা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে। মাঝ রাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ওড়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ সন্তানকমান্ড সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টায় সরজমিনে ভোলা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড স্টেডিয়াম সড়ক ভোলা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সদস্যরা জাতীয় পতাকাটি নামিয়ে ফেলেন।

স্থানীয় মো. কামাল বলেন, এই অফিসে প্রায় সময় জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় রাত ৭/৮ টার সময় দেখা গেছে পতাকা নামাতে। এখন রাত সাড়ে ১২টা বাজে, এখানে পতাকা উড়ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পতাকা নামানোর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

ভোলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন শাহীন বলেন, জাতীয় পতাকা প্রতিটি রাষ্ট্র ও জাতির স্বকীয়তা এবং স্বাধীন-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিদর্শন লাল-সবুজের পতাকা। এই পতাকার সম্মান রক্ষা আমাদের সব নাগরিকের কর্তব্য। এ ব্যাপারে উদাসীনতা কাম্য নয়।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব আদিল হোসেন তপু বলেন, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। ৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা পেয়েছি। এ পতাকার অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। গত ২ মাসে একই রকম পরপর তিনটি স্থানে জাতীয় পতাকাকে অসম্মান ও অবমাননা করা হচ্ছে কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আগামীতে জাতীয় পতাকা অবমাননা করার কেউ সাহস পাবে না।

ভোলা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উপ-পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, রাতে জাতীয় পতাকা ওড়ার কথা আমার জানা নেই। আমি অফিসের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জাতীয় পতাকা নামানোর ব্যবস্থা করছি।

তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের ফোন পেয়ে মো. মনজু নামে এক স্টাফ এসে জাতীয় পতাকা নামিয়ে নেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবস উপলক্ষে অফিসে অনুষ্ঠান ছিল তা শেষ করার পরেই দুপুর থেকে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলায় অংশগ্রহণ করতে আমরা প্রায় সবাই চলে যাই। কাজের চাপে অফিসের পিয়ন পতাকা নামাতে ভুলে গেছেন। আগে এরকম ভুল কখনও হয়নি।

এ বিষয়ে ভোলা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল আলিম সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ২০১নং শিবপুর কালিকীর্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে একই ইউনিয়নের ২৪নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এমন ঘটনা ঘটে।

ইমতিয়াজুর রহমান/এসএসএইচ