পোড়াদহ মেলায় ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড়

৪০০ বছর ধরে বগুড়ার পোড়াদহে বসছে মাছের মেলা। বিখ্যাত এই পোড়াদহ মেলা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ইছামতী নদীতীরে বসেছে। পোড়াদহ মেলা মানেই বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছের মেলা ও মাছের আকৃতির মিষ্টির পসরা। প্রতিবছর এ মেলা কেন্দ্র করে জমে ওঠে মাছের বাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

মেলায় নজর কেড়েছে ৬০ কেজি ওজনের যমুনা নদীর বিশাল বাঘাইড়। মাছ ব্যবসায়ী শুকুর আলী মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা।

অপরদিকে ৪৫ কেজি ওজনের আরও একটি বাঘাইড় নিয়ে এসেছেন মোস্তাফিজার। গাবতলী উপজেলার রানিরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে মাছটির দাম হাঁকা হচ্ছে ৬৪ হাজার টাকা। এটিও যমুনা নদীর মাছ।

প্রতিবছর বাংলা সনের পৌষের শেষ বুধবার এই পোড়াদহ মাছের মেলা বসে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় দেখা মিলে বড় এসব মাছের। পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণেও রয়েছে শতাধিক খুচরা মাছ বিক্রেতা। সারিবদ্ধভাবে এসব ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দোকানে মাঝারি ও ছোট বিভিন্ন জাতের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা।

গাবতলীর মহিষাবান এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শুকুর আলী। প্রতিবছর তিনি মেলায় বড় বড় আকৃতির মাছ নিয়ে হাজির হন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মোস্তাফিজার যমুনা নদীতে ধরা পড়া বিশাল আকৃতির বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন মেলা আসায় দর্শনার্থীরা। বগুড়াসহ আশপাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন মাছ দেখতে ও কিনতে।

দেড় কেজি থেকে শুরু করে ১৪ কেজি ওজনের মাছ-মিষ্টি

মেলার আশপাশে অবস্থিত গ্রামগুলোতে প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরা আসেন এই মেলা দেখতে। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামগুলো হয়ে ওঠে উৎসবের স্থল। দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন, মাছের সঙ্গে সেলফিও তুলছেন। প্রতিটি দোকানে ছিল মাছের সমারোহ। মাছ ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানায়, ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটির দাম কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা করে হাঁকিয়েছেন।

মেলায় বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ৪০০ বছরের ঐতিহ্য এই পোড়দহ মেলা। মেলায় সকল প্রকার নিরাপত্তায় কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। বিশাল আকৃতির মাছের এই পোড়াদহ মেলা, যা বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করে।

শফিকুল ইসলাম, মিনার, শাহিন, জিহাদ ইসলাম, দেলবরসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা জানায়, এ মেলায় গাঙচিতল, চিতল, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, কালবাউশ, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ওজনে ৫-২০ কেজি পর্যন্ত রয়েছে।

মাছ বিক্রেতারা জানায়, প্রতি কেজি গাঙচিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৭০০টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, হাঙড়ি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা। পলিথিন দিয়ে বানানো পুকুরে জীবন্ত মাছ নিয়ে হাঁক ছাড়ছেন রফিক, মাহফুজল।

মেলায় ১০ কেজি ওজনের মাছের আকৃতির বিশাল মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছে। যার দাম বিক্রেতা স্বপন চাইছেন প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা করে। 

আকারভেদে এই মেলায় প্রতিটি মাছ-মিষ্টি দেড় কেজি থেকে শুরু করে ১৪ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি মিষ্টির দাম বিক্রেতা হাঁকিয়েছেন ২৫০ টাকা করে। এ ছাড়াও মেলায় রয়েছে সার্কাস, হোন্ডা খেলা, নাগরদোলা, চড়কি, নৌকাসহ নানা ধরনের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা।

মেলায় বেড়াতে আসা গোবিন্দগঞ্জ এলাকার সুমাইয়া, পিয়াসা, ববি, রবিন, শেখর ও বাবুল জানায়, তারা প্রতিবছর মেলা উপলক্ষে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বছরের অন্য সময় বেড়াতে না আসলেও এ সময় তারা বড়বড় মাছ দেখতে ছুটে আসেন। 

সাখাওয়াত হোসেন জনি/এমএসআর