‘এখনো ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তার আগেই যদি দেয়াল ভেঙে পড়ে, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে? আমি বৃদ্ধ মানুষ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পাকা ঘর করে দিচ্ছেন। কিন্তু কাজের যে অবস্থা তাতে একটু ভয়ে আছি। শেষ বয়সে এসে না জানি কখন কী হয়। এই ঘরে থাকতে পারব কিনা সন্দেহ।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সত্তরোর্ধ্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনোদ রায়। উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের নলঝুঁড়ি এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘বীর নিবাস’। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনোদ রায়ের জন্য একটি পাকা ঘর বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ধসে গেছে নির্মাণাধীন ঘরের একাংশের দেয়াল।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই উপহার পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিনোদ রায় যতটা খুশি হয়েছিলেন, দেয়াল ধসে পড়ায় এখন তিনি ততটাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিনোদ রায় জানান, নির্মাণাধীন বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়ার বিষয়টি পিআইওকে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এতে তার ওপর ক্ষুদ্ধ হয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।
   
তিনি বলেন, আমার ছেলে পিআইও স্যারকে দেয়াল ভেঙে পড়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু স্যারতো খুব রাগ করেছেন। উনি উল্টো আমার ছেলেকে বলেছেন- শুধু নাকি আমরাই অভিযোগ করেছি। যাই হোক দেয়াল ভেঙে পড়ার ঘটনার পর ইউএনও স্যার, এসিল্যান্ড স্যারসহ চেয়ারম্যান এসে বাড়িঘর দেখেছেন। আমি চাই ভালো মানের কাজ হোক, যাতে ভবিষ্যতে চিন্তামুক্ত থাকা যায়।

তবে অসদাচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিআইও আহসান হাবীব সরকার। তিনি বলেন, দেয়াল ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে কুর্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও ছিলেন। রাজমিস্ত্রিদের কিছুটা গাফিলতির কারণে এমনটা হয়েছে। ঠিকাদারকে দেয়ালের ভেঙে যাওয়া অংশটি নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যয়ন ছাড়া ঠিকাদারকে নির্মাণ কাজের বিল দেওয়া হবে না। তবে সেখানে নিম্নমানের কাজ হয়নি বলে দাবি করেন ইউএনও।

প্রসঙ্গত, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নামকরণ করা হয় ‘বীর নিবাস’। কাউনিয়া উপজেলায় প্রথম ধাপে ১২টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি ঘরে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৮ টাকা। দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর