এলজিইডির দুই প্রকৌশলীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত

রংপুরে ঘুষ ছাড়া কাজ না দেওয়ার অভিযোগে এক ঠিকাদারের করা মামলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দুই প্রকৌশলীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

তারা হলেন এলজিইডি রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন এবং সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান কাওছার আলম।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তারা। শুনানি শেষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শাহেনূর। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ছয় কোটি ৬৬ লাখ টাকার কাজে ২ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি; সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘুষ ছাড়া কাজ না দেওয়ার অভিযোগে ওই দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে স্পেশাল জজ আদালতে (দুদক) মামলা করেন ঠিকাদার রবিউল আলম বুলবুল।

দুদুকের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম হারুন-উর রশীদ ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। 

মামলার নথির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় চার কোটি ২৬ লাখ ও দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে দুটি প্যাকেজে ছয় কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিধি মোতাবেক ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ৪ মার্চ দরপত্র জমা দেন নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার মৃত আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে ঠিকাদার রবিউল আলম বুলবুল।

কিন্তু দরপত্র দুটি গ্রহণ ও অনুমোদন করার পরও নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) না দিয়ে রবিউল আলম বুলবুলের কাছে মোট কাজের (ছয় কোটি ৬৬ লাখ টাকা) দুই শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেন দুই প্রকৌশলী। এ অবস্থায় ঠিকাদার রবিউল আলম বুলবুল দুই শতাংশ টাকা না দেওয়ায় তাকে নিষ্ক্রিয় হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও তাকে কাজ না দিয়ে অন্য একজনকে কাজ দেওয়া হয়।

হারুন-উর রশীদ, পাবলিক প্রসিকিউটর

এ ঘটনায় সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে (দুদক) এলজিইডি রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান কাওছার আলমকে আসামি করে ২০১৯ সালের ৭ মে মামলা করেন ঠিকাদার বুলবুল। তদন্ত শেষে দুদুকের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

ওই মামলায় নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন এবং সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান কাওছার আলম উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন। 

বুধবার তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। তারা দুজন রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবদেন করেন। শুনানি শেষে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

দুদুকের আইনজীবী একেএম হারুন-উর রশীদ বলেন, ঘুষ না পেয়ে ওই দুই প্রকৌশলী জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে অন্য একজনকে কাজ দেওয়ায় এক কোটি ২৬ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে দুই প্রকৌশলীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। দুজনের মধ্যে আখতার হোসেন বদলি হয়ে বর্তমানে ঢাকাতে প্রধান কার্যালয়ে এবং অপরজন রংপুরে কর্মরত রয়েছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম