শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, রাজনীতির বাইরে তো জীবন নয়। অনেকে বলেন রাজনীতি করি না, কারণ রাজনীতি ভালো না। কোন জায়গার সব লোক ভালো বলেন। ভালো-মন্দ মিলেই তো আমরা সবাই। 

শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর দে এ মান্নান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সবার মধ্যে ভালো-মন্দ প্রবণতা আছে। রাজনীতিতে যারা আসেন তারাও এই সমাজেরই মানুষ, তাহলে সেখানেও ভালো-মন্দ আছে, শিক্ষকদের মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে, চিকিৎসকদের মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে। আপনি দলীয় রাজনীতি না করতে পারেন, কিন্তু প্রত্যেককে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। কারণ এই রাজনীতিতে আপনার জীবনের সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আপনি কোথায় থাকবেন, আপনার মাথার ওপর ছাদ থাকবে কিনা, আপনার পাতে খাবার আসবে কিনা, আপনি সকালে উঠে কলটা চালালে পানি আসবে কিনা,  সন্তান কেমন স্কুলে পড়বে, কেমন পড়াশোনা হবে, আপনার কর্মসংস্থানের কী ব্যবস্থা হবে, আপনার রাস্তাঘাট ভালো হবে কি হবে না, হেন সিদ্ধান্ত নেই যে সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে গ্রহণ করা হয়  না। 

তিনি বলেন, আপনি যদি রাজনীতি সচেতন না হন, তাহলে আপনি পাঁচ বছর পর পর যে নির্বাচন আসে কাকে ভোট দেবেন। ভোট দেওয়ার বেলায় তো আপনাকে জানতে হবে আপনি যাকে ভোট দেবেন সে কি আপনার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবে, সে কি আপনার জীবনমান উন্নয়ন করবে, সে কি আপনার সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে, সে কি আপনার দেশের খাদ্য উৎপাদান বাড়াতে পারবে, সে কি আপনার দেশকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে পারবে? এসব জানতে হবে। নাকি সে দেশকে পিছিয়ে দেবে, অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে? কাজেই আপনার হাতেই যেন সিদ্ধান্তের চাবিকাঠি থাকে। 

দীপু মনি বলেন, আমি কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি লেখা আছে ধূমপানমুক্ত রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। ধূমপান আর রাজনীতি এক বস্তু না। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আর রাজনীতি প্রত্যেক মানুষের জন্য। আর সেজন্যই শিক্ষার্থীদের বলব এবং এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদেরকে বলব, আসুন আমরা সেই সঠিক রাজনীতিকে চিনে নিই। 

তিনি বলেন, আমরা আমাদের এই উপমহাদেশ বা আমাদের এই ভূখণ্ডে গত ১০০ বছরের ইতিহাস দেখি। আমরা দেখি রাজনীতির মূল দুটি ধারা আছে। একটি হলো উদার, অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রের ধারা। আরেকটি ধারা যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের এবং ধর্মান্ধগোষ্ঠীর সংকীর্ণ একটি চিন্তাধারা নিয়ে ধাবিত হয়। আমরা এই দুটি ধারাকে যেন চিনতে পারি। আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যেন মনে রাখি। আজকে ২৫শে মার্চ। আমরা যেন মনে রাখি কারা ছিল ৭৫ এর গণহত্যাকারীদের দোসর। কারা ছিল ৭১ এর হানাদার বাহিনীর দোসর। আমরা যেন ভুলে না যাই ৭১ সালে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তারা এবং তাদের দোসর কারা। আমরা যেন ভুলে না যাই ৭১ এর পরাজিত অপশক্তিকে, যারা ৭৫ এ ছোবল মেরেছিল। 

আমরা যেন ভুলে না যাই ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এই দেশকে কারা হত্যা-ধর্ষণের ভূমিতে পরিণত করেছিল। আমরা যেন ভুলে না যাই কারা ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করেছিল। আমরা যেন ভুলে না যাই যারা ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তার বিপরীতে আমরা যেন মনে রাখি কার নেতৃত্বে আমরা আজকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি।  আজকে আমরা স্বল্পউন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়েছি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবন কেমন ছিল ১৩-১৫ বছর আগে, এখন আমরা কোথায় পৌঁছেছি। আমরা এখন রাস্তায় বের হলে মানুষের মিছিল দেখি না। পায়ে জুতা-স্যান্ডেল নেই, গায়ে কাপড় নেই, একবেলা না খেয়ে আছে- এমন কোনো মানুষ আজকের এই বাংলাদেশে নেই। আজকের এই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে হাতে মোবাইল। এখন অনুষ্ঠানে গেলে তালিও পড়ে না। কারণ এক হাতে সবার মোবাইল থাকে। এ হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ।  

অনুষ্ঠানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন , মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার, গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, ভাটেরচর দে এ মান্নান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মু. শাহজাহান শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আতাউর রহমান মিয়াজী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিরুল ইসলাম শিকদার, গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে উপ-সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক, টেঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাছান ফরাজী  প্রমুখ।

ব.ম শামীম/আরএআর