বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। পরনে লাল ও পেস্ট রঙের সালোয়ার-কামিজ। মাথায় কাঁচা-পাকা ছোট চুল। গায়ের রঙ শ্যামলা। অজ্ঞাত পরিচয়ের এই নারী চিকিৎসাধীন রয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। ভাঙা পা আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে এক মাস ধরে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের বেডে থাকলেও মেলেনি পরিবারের খোঁজ।

এদিকে হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্ট্রারে ওই নারীর নাম লেখা রয়েছে রেখা দেবী। স্বামীর নাম কপিল দাস (শুকদেব)। বাড়ি ভারতের ওয়ারি। গ্রামের নাম ফেনি বাগান। হিন্দি আর বাংলায় আধো আধো স্বরে কথা বলায় কেউ তার ভাষা বুঝতে পারছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ওই নারী বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই মাথা নাড়িয়ে বাড়ি যেতে চাইছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, যশোর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে জানালার পাশে ৫ নম্বর বেডে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব ওই নারী। আধখোলা চোখে ময়লা জমে আছে। সারা শরীরেই ছোপ ছোপ ময়লা। বা পায়ে সাদা ব্যান্ডেজ। বেডে দুটি কলা, একটি সিদ্ধ ডিম আর কয়েকটি ওষুধের খালি খোসা পড়ে রয়েছে। তার দিকে ক্যামেরা তাক করতেই ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকান। 

নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে আধো আধো স্বরে কখনো বাংলা আবার হিন্দিতে এক নাগাড়ে কথা বলতে থাকেন। অস্পষ্ট কথা বলার মাঝে প্রতিবেদক বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, মেরা বাড়ি ইন্ডিয়া। এখন কেমন আছেন? বাড়ি যেতে চান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন।

এই ওয়ার্ডের আয়া শাহানারা বেগম বলেন, ওই অজ্ঞাত রোগীকে স্যালাইন পুশ করার কিছুক্ষণ পরই তা ছিঁড়ে বিছানার অন্য স্থানে সরে যাচ্ছে। প্রস্রাব ও মলত্যাগ করছেন বিছানায়। আমরা অনেক দিন ধরে তাকে সেবা-যত্ন করছি। তাকে সেবার কোনো ত্রুটি রাখিনি।

ওই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ মদিনা আক্তার বলেন, প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ওই নারী। যশোর-বেনাপোল সড়কের নাভারণ এলাকায় ২১ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় তার একটি পা ভেঙে যায়। এরপর ওই এলাকার মামুন নামে এক ব্যক্তি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রথমে তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকলেও তার অপারেশন আর চিকিৎসায় তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে উনি নাম বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারছেন না। হিন্দিতে কথা বলায় তার সব কথা বুঝতে পারছি না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, অজ্ঞাত ওই নারী বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ আছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি।  

জাহিদ হাসান/এসপি