ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ ও সলঙ্গার আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. আ. আজিজ কখনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনও কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার চৌদ্দগুষ্টিই আওয়ামী লীগের হাইব্রিড বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. হোসেন মুনসুর।

শনিবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনোদপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব আইডিয়াল সরকারি কলেজে ড. হোসেন মুনসুর ফাউন্ডেশন কতৃক আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।   

ভিডিওতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হোসেন মুনসুর মন্তব্য করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আ. আজিজ গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মনোনীত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়েছেন। কোনো এমপি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কিন্তু তিনি বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়েছেন। এমপি আজিজের চৌদ্দগুষ্টি কখনও আওয়ামী লীগ করেননি, তিনি নিজেও আওয়ামী লীগ করেননি। আওয়ামী লীগ করতে হলে কর্মী হতে হয়, কর্মী থেকে আওয়ামী লীগের নেতা হতে হয়। কিন্তু তুমি (এমপি আজিজ) কিসের আওয়ামী লীগ। 

প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী ম.ম আমজাদ হোসেন মিলনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগকে আমজাদ হোসেন মিলন তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। কিন্তু তিনি একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। 

তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, দলের প্রতি অবদান আছে, তারা আমাদের সঙ্গে থাকো। কোনো হাইব্রিড, বিএনপি থেকে আসা তোমাদের কিছু করতে পারবে না। এ সময় দ্বাদশ নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। কিন্তু নেত্রী যদি আমাকে না দেন, সমস্যা নেই। কিন্তু নেত্রী যেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী ও নেতাদের মধ্যে থেকে কাউকে মনোনয়ন দে। ওই রকম হাউব্রিড, দুই নম্বর লোককে যেন মনোনয়ন দেওয়া না হয়। 

এমপির অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. হোসেন মুনসুর বলেন, সরকারের পক্ষে থেকে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এমপি প্রতিটি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পাঁচ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। বাংলাদেশের কোথাও নেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সংসদ সদস্যকে টাকা দিতে হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালীন সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোক্তার হোসেন। তিনি এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড. হোসেন মুনসুর যখন কথাগুলো বলেন তখন সেখানে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তারা শুনেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কথাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এগুলো সবাই জানেন। তবে এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, তিনি একজন অভিজ্ঞ মানুষ। তাই যা বলেছেন অবশ্যই কারণ ছাড়া বলার কথা নয়। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।

তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কুমার কর্মকার মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি এবং দলীয় কার্যালয়েও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে একজন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য যখন এ ধরনের কথা বলেন, তাহলে অবশ্যই তার কাছে তথ্য প্রমাণ আছে। তবে আমি এই বিষয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না। তবে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ ও সলঙ্গা আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. আ. আজিজের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হোসেন মুনসুর মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যা বলেছি তার সবই সত্য। তিনি নিজেও কখনো আওয়ামী লীগ করেনি এবং তার পরিবারেরও কেউ আওয়ামী লীগ করেননি। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ-সলঙ্গা) আসনে নৌকার মনোনয়ন পান ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আ. আজিজ। ওই নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে তিনি নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেন।

শুভ কুমার ঘোষ/এসপি