বগুড়ায় চলছে বউমেলা

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ৪০০ বছরে পুরোনো পোড়াদহ মেলায় জমে উঠেছে বউমেলা। মেলায় বাড়ির বউয়েরা আজ এসছেন কেনাকাটা করতে। তারা কিনছেন চুড়ি, ফিতা, দুল, ক্লিপ, মাথার ব্যান্ড, চুলের প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। রীতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে ‘বউমেলা’। তাই আজ মেলায় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা আসতে পারবেন না বলে রীতি রয়েছে।

এদিকে কসমেটিকস ও খেলনার দোকানগুলোয় রমণীদের ভিড় লক্ষণীয়। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সব কাজ সেরে গাবতলী উপজেলার প্রায় সব গ্রামের নারীরা আজ ভিড় করেছেন মেলায়। তাদের সঙ্গে আছে বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা। তাদের জন্য পছন্দের খেলনা কিনছেন নারীরা।

মেলায় কথা হয় গাবতলী উপজেলার উদ্দিরকোলা গ্রামের দুই ছেলের জননী সাকিলা বেগমের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, তার বাবার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। বিয়ের পর থেকে এবার নিয়ে ৯ বার মেলায় এসেছেন। বড় ছেলে শরিফুল বেসরকারি চাকরি করেন। মেলার প্রবেশমুখ পর্যন্ত এসে তাকে রেখে অপেক্ষা করছেন বাইরে। স্বামী সঙ্গে না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, রীতি রয়েছে, আজ বউমেলায় পুরুষদের আসতে মানা। তাই তিনি আসেননি। গতকাল বাড়িতে অনেক মাছ কেটেছি। আজ এসছি মেলায়। এখন প্রসাধনী কিনব, তাই বেশি কথা বলা যাবে না।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের পুত্রবধূ টুম্পা পাল। তিনি জানান, দাম যেমনই হোক পছন্দের বাহারি রঙের চুড়ি কিনেছেন। আরও অনেক কিছু কিনতে হবে। শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মা ও পরিবারের ছোটদের জন্য অনেক কিছু কিনবেন। এদিকে পছন্দের পণ্য চোখে পড়ায় তিনিও ব্যস্ত হয়ে গেলেন দর-কষাকষিতে। আর এভাবে প্রায় ১০ গ্রামের বউদের চলছে বউমেলায় কেনাকাটা।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মেলার প্রথম দিনে চলেছে ফার্নিচার কেনাকাট। দ্বিতীয় দিন বুধবার ছিল মূল আকর্ষণ ৬০ কেজির বাগাড় মাছ। এদিন মূলত চলে মাছের কেনাকাটা। মেলার প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের বেচাকেনায় প্রাধান্য ছিল ফার্নিচার, মাছ ও মিষ্টিসহ বিভিন্ন সামগ্রী। তবে এদিন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন পুরুষরা। শেষ দিন একই স্থানে সকাল থেকে শুরু হয়ে বউমেলা চলে সন্ধ্যা অব্দি।

৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই চলে আসছে এ রীতি। এমনটাই জানা যায়। মাছের মেলা শেষ হওয়ার পর রাতের মধ্যেই বাহারি কসমেটিকস আর খেলনার পসরা সাজানো হয় সকাল থেকে বউমেলায় বিক্রির জন্য।

বগুড়ার গাবতলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, বউমেলায় রয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ সদস্যরা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত। মেলা বাঙালির ঐতিহ্যকে লালন করে। পোড়াদহ মেলা ৪০০ বছরে পুরোনো। তাই এখানে জনসমাগম অনেক বেশি হয়।


সাখাওয়াত হোসেন জনি/এনএ