ওসি বশিরুল আলম

মিথ্যা অভিযোগ এনে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পরে ৯৯৯-এ কল করায় ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ওসির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুনরায় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছেন এই ওসি।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন রাসেলের বোন সাহানা বেগম। অভিযোগে তিনি মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পায়ার আরজি জানান।

অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলম বরগুনার বামনা থানায় দায়িত্বরত আছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বামনা উপজেলার খোলপটুয়া বাজারে রাসেল নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ইলেকট্রিক পণ্যের দোকান রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওসি বশিরুল আলম ইলেকট্রিক তার কেনেন রাসেলের দোকান থেকে। কিছুক্ষণ পর নিম্নমানের তার বিক্রির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী রাসেলকে থানায় ডেকে পাঠান ওসি। পরে স্বজনরা থানায় গেলে ওসি বলেন, রাসেল নিম্নমানের তার বিক্রি করছে। এ সময় পরিবারের কাছে কারাগারে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। উপায় না পেয়ে স্বজনরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে রাসেলকে ছাড়িয়ে নেন।

একই দিন সন্ধ্যায় রাসেল মল্লিক জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে ২০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানান। এতে ওসি বশিরুল আলম ঘুষের ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর স্থানীয় কয়েকজন নারীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে হয়রানি করেন রাসেল ও তার পরিবারকে। এসব মামলায় ভয় দেখিয়ে এবার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে রাসেলের বোন সাহানা বেগম বলেন, দুই নম্বর তার বিক্রির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওসি বশিরুল আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। সে আমাদের কাছে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে আমরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাই।

কিন্তু আমার ভাই ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানালে ওসি আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর থেকেই আমরা নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছি। এসব মামলায় তিনি আবারও আমাদের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাধ্য হয়ে আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।

ব্যবসায়ী রাসেল মল্লিক বলেন, আমি দোকানে কোনো ভেজাল বা দুই নম্বর পণ্য রাখি না। ওসি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যান। পরে আমার বোন ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। ওই দিনই আমি ৯৯৯-এ কল করে পুরো ঘটনা বলি। পরদিন ওসি আমার দুলাভাইয়ের কাছে ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

রাসেল বলেন, এরপর স্থানীয় একটি চক্রের নারীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ দেওয়ান। এরপর থানায় ডেকে নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন ওসি। এই টাকা না দিলে আমাকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি। নিরুপায় হয়ে ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি মিথ্যা। এ রকম কিছু হয়নি। অন্য কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, এ বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পেলে ওসি বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএ