ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের লালপুর বাজারের ছোট্ট একটি মিষ্টির দোকান। নাম মা মিষ্টান্ন ভান্ডার। দোকানটিতে ১৬ বছর ধরে হরেক রকম মিষ্টি তৈরি করছেন হরিধন পাল। তার দোকানের মিষ্টির মধ্যে ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্পঞ্জ মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় এই মিষ্টি খেতে দূর-দূরান্ত থেকে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারে আসেন মানুষজন। অনেকে স্বজনদের জন্য বিদেশেও পাঠান এই মিষ্টি। আর তাই লালপুর ছাড়িয়ে হরিধন পালের স্পঞ্জ মিষ্টির সুনাম ছড়িয়েছে বিদেশেও।

জানা গেছে, মা মিষ্টান্ন ভান্ডারে প্রতিদিন প্রায় আড়াই মণ স্পঞ্জ মিষ্টি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি স্পঞ্জ মিষ্টির দাম ২৪০ টাকা। সে হিসেবে মাসে ৭ লাখ টাকারও বেশি স্পঞ্জ মিষ্টি বিক্রি করেন হরিধন পাল। স্পঞ্জ মিষ্টির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্যসব মিষ্টিও বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ মণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাশেই লালপুর বাজারের অবস্থান। প্রাচীন এই বাজারটিতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে সর্বপ্রথম মিষ্টান্নের দোকান দেন লালপুর গ্রামের বাসিন্দা শচীন্দ্র পাল। তখন তার তৈরি মিষ্টান্নই যেত লালপুরের বাসিন্দারের ঘরে ঘরে। শচীন্দ্র পালের মৃত্যুর পর এখন তার দুই ছেলে হরিধন পাল এবং সুধাংশু পাল মিষ্টান্নের ব্যবসা করছেন। এর মধ্যে মা মিষ্টান্ন ভান্ডার চালাচ্ছেন হরিধন পাল। আর সুধা মিষ্টান্ন ভান্ডার চলছে সুধাংশ পালের তত্ত্বাবধানে।

হরিধন পালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ১৯৯৩ সালে মিষ্টান্নের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ব্যবসা রেখেই ১৯৯৭ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে দেশে এসে আবার মিষ্টান্ন ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে এ ব্যবসা করেই পরিবার চলছে তার।

পুনরায় ব্যবসা শুরুর কয়েক মাস পর অন্যান্য মিষ্টির সঙ্গে স্পঞ্জ মিষ্টি বানানো শুরু করেন হরিধন। গরুর খাঁটি দুধের ছানায় তৈরি হয় তার স্পঞ্জ মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় স্পঞ্জ মিষ্টির কারণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে মা মিষ্টান্ন ভান্ডার। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মা মিষ্টান্ন ভান্ডারে আসেন স্পঞ্জ মিষ্টির জন্য। তবে স্পঞ্জের পাশাপাশি মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের অন্য মিষ্টিগুলোও খেতে সুস্বাদু। আর স্বাদে অনন্য হওয়ায় সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সুনাম। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তৈরি হয় স্পঞ্জ মিষ্টি। তৈরি করা সব মিষ্টি সন্ধ্যার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়।

আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ডালিম জানান, লোকমুখে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্পঞ্জ মিষ্টির কথা অনেক শুনেছি। দেখতে অন্যসব দোকানে তৈরি স্পঞ্জ মিষ্টির মতো হলেও মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্পঞ্জ মিষ্টি খেতে সুস্বাদু। সেজন্য প্রায়ই এ দোকানে আসেন মিষ্টি খেতে। মাঝে-মধ্যে প্রবাসে থাকা প্রিয়জনদের জন্যও মিষ্টি পাঠানো হয়।

আশুগঞ্জ সার কারখানা কলেজের অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান জানান, তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলায়। আশুগঞ্জে আসার আগে তিনি লালপুরের মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টির কথা শুনেছেন। এখানকার মিষ্টি খেয়ে তার অনেক ভালো লেগেছে এবং ঢাকায় তার আত্মীয়ের জন্য মিষ্টি পাঠিয়েছেন।

লালপুর গ্রামের বাসিন্দা বাকের আহমেদ জানান, এলাকার মুরব্বিদের মুখে শুনেছেন হরিধন পালের বাবা শচীন্দ্র পাল লালপুর বাজারে সর্বপ্রথম মিষ্টান্ন ব্যবসা শুরু করেন। এখন মা মিষ্টান্ন ভান্ডার লালপুর বাজারে আগতদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম। সুস্বাদু মিষ্টি তৈরির জন্য এই দোকানের অনেক সুনাম আছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে মিষ্টি নেওয়ার জন্য। বাজারে আরও কয়েকটি দোকান আছে। সবগুলোতেই ভালো মিষ্টি বানানো হয়। তবে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টির কদর বেশি।

মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী হরিধন পাল বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি প্রাণধন দেবের কাছ থেকে স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরির কাজ শিখেছিলাম। তিনিও মিষ্টির ব্যবসা করেন। অন্য দোকানের চেয়ে আমার দোকানের স্পঞ্জ মিষ্টির দাম কিছুটা বেশি। কারণ আমার মিষ্টিতে কোনো ভেজাল নেই, সম্পূর্ণ ছানায় তৈরি হয়। সেজন্য মানুষ এ মিষ্টি খুব পছন্দ করে।’

লালপুর বাজার কমিটির সভাপতি মো. জালাল মিয়া বলেন, ‘গত ৫-৭ বছর ধরে হরিধন পালের স্পঞ্জ মিষ্টি খুব বেশি চলছে। বাজারে আরও দোকান আছে। কিন্তু হরিধনের মতো কেউই বানাতে পারে না। ক্রেতাদের কাছে তার বানানো মিষ্টির কদরই বেশি। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি নিতে’।

এসপি