চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে আড়াই মাসের শিশুপুত্রকে হত্যার অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীতে নেওয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু হয়।

এর আগে বুধবার সকালে শিশুটি অসুস্থ হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে রাজশাহীতে নেওয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনার অভিযোগে বাবাকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

ওই শিশুর নাম ইকবাল। সে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের ইখলাস উদ্দিনের ছেলে। ইখলাস চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার কামাল উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন।

ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা জানান, দুই বছর ধরে আমাদের সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকছেন ইখলাস। তিনি তার শিশুসন্তানকে কখনো কোলে নিতেন না। দিনে বাড়িতে থাকলেও রাতে কখনো থাকতেন না। গত পাঁচ দিন রাতে বাড়িতে থাকছিলেন। বুধবার সকালে শিশুপুত্রের পায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করেন ইখলাছ। শিশুটিকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রাজশাহী নেওয়ার পথে ইকবালের মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ শিশুর নানাবাড়ি আলমডাঙ্গার সোনাতনপুরে নেওয়া হয়।

সেখান থেকে ইকবালের মরদেহ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের একাডেমি মোড় থেকে বাবা ইখলাছকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় শিশুর মা বাদী হয়ে ইখলাসকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের আঠারোখাদা গ্রামের ইখলাছ উদ্দিন চার বছর আগে জেহালা ইউনিয়নের সোনাতনপুরের আব্দুল মোমেনের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা মিতালী খাতুন মিতাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।ইখলাছের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন নিঃসন্তান, বাড়িতে থাকেন। বিয়ের পর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে নিয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরে থাকতেন। 

শিশু ইকবালের মা মিতালী খাতুন মিতা অভিযোগ করে বলেন, আমার অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিক কলহের কারণে বিচ্ছেদ হয়। আমার আগের পক্ষের দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন আমার বাবার কাছে থাকে। চার বছর আগে প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় ইখলাছ আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে সে আমাকে সন্দেহ করতে থাকে। পরে আমাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান। ওই ছেলে তার নয় বলে জানায় ইখলাছ।

মিতা আরও বলেন, বুধবার সকালে বাড়ির কাজ করছিলাম। সে সময় ইখলাছ ছেলেকে কোলে নেয়। হঠাৎ সুস্থ ছেলে কেঁদে ওঠে। পরে গিয়ে দেখি আমার ছেলের বাম পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এর আগেও সিরাপের মধ্যে কোনো বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল। সেই ওষুধ খাওয়ানোর পর আমার ছেলে বমি শুরু করে। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। 

এ সময় ইখলাছের কাছে জানতে চাইলে সে টিকা দেওয়ার স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে বলে জানায়। পরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার জানায়, টিকা দেওয়ার স্থান থেকে কোনো রক্ত বের হয়নি। ছেলের বাম পায়ের অন্য স্থানে একটি ইনজেকশন পুশ করার চিহ্ন রয়েছে। সেখানে ফুলে গেছে। আমার ছেলেকে বাম পাশে বিষ মিশ্রিত ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে।

মিতা বলেন, ১৫ দিন আগে আমার ছেলে অসুস্থ হলে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অমিডন নামে একটি সিরাপ কিনে চার দিন খাওয়ায়। পাঁচ দিনের দিন সেই সিরাপ থেকে বিষের গন্ধ পাই। সন্দেহ হলে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করি। কে বা কারা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওষুধে বিষ মিশিয়ে রেখেছিল সে সময় বুঝতে পারিনি।

বাড়ি মালিকের স্ত্রী বলেন, সকালে শিশু ও তার মায়ের কান্নায় ছুটে আসি। এসে দেখি শিশুটি খুব কান্না করছে এবং তার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। শিশুটির পায়ে টিকা দেওয়ার স্থানের পাশে একটি ফুটো দেখতে পাই। গত চার দিন আগে শিশুটিকে টিকা দেওয়া হয়। টিকার স্থান শুকিয়ে গেছে। পাশে আরও একটি ইনজেকশনের ফুটো দেখে সন্দেহ হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার সকালে শিশু ইকবালকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির খিচুনি হচ্ছিল। তার মা অভিযোগ করেছিল কেউ ওষুধের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। সেটা খেয়ে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করা হয়। তবে শিশুটির পায়ে কোনো ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। বেঁচে থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে বলা যেত। 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইখলাছকে আলমডাঙ্গা থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা থানায় নেওয়া হয়েছে। শিশুর মরদেহের সুরতহাল শেষে আজ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। রাতেই এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বোঝা যাবে এটা হত্যা কি না।

আফজালুল হক/এসপি