পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গত বছরের মতো এবারও সাধারণ মানুষের জন্য কোনো লাভ ছাড়া নিজের কেনা দামে চাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত ফকির। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তরুণ চাল ব্যবসায়ী এর আগে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের গোসল ও দাফন দিয়ে আলোচনায় ছিলেন।

শাহাদাতের দোকানে মিলবে চাল মোটা ১ নং স্বর্ণাগুটি ৩৯ থেকে ৪০ টাকা দরে, পাইজাম ৪০ টাকা দরে, পিউর আঠাশ ৫০ টাকা এবং উনত্রিশ ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন শাহাদাত। এই সেবা ২৫ রমজান পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এ বছর নলছিটি ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার জন্য সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি সম্বলিত তিন হাজার ক্যালেন্ডার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। এই রমজান উপলক্ষে সামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন ৫০টি পরিবারকে খাবার দিয়েছে। তার নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে একটি ইফতার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০০ পরিবারকে ১১ ধরনের প্যাকেজ খাবার দিয়েছে।

প্রতি প্যাকেজে চিড়া ১ কেজি, ছোলা বুট ২ কেজি, সেদ্ধ চাল ১০ কেজি, চিনি ১ কেজি, সয়াবিন তেল ১ লিটার, ট্যাঙ ২৫০ গ্রাম, টিস্যু প্যাকেট ১টি, মুড়ি ১ কেজি, খেজুর ৫০০ গ্রাম, আলু ২ কেজি এবং পেঁয়াজ ১ কেজি।

শাহাদাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান উপলক্ষে সাধারণ ক্রেতাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে কেনা দামে চাল বিক্রি করছি। যে দামে কেনা, ঠিক একই দামে বিক্রি। এক পয়সাও লাভ করছি না। পুরো রমজানজুড়ে এটি অব্যাহত থাকবে। তবে যারা ব্যবসার জন্য চাল কিনবেন, তাদের পাইকারি দরেই কিনতে হবে।

শাহাদাত কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘শাবাব ফাউন্ডেশন’। নিজের মায়ের নামে করা সামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন থেকে রমজানেও ৫০ পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। সম্মিলিতভাবে আরও ১০০ পরিবারকে দিয়েছেন ১১ আইটেম সংবলিত খাবার। করোনায় নিজের ফাউন্ডেশন থেকে ১৫০ জনের বেশি রোগীকে দিয়েছেন অক্সিজেন সেবা। গত দুই বছর রমজানে ব্যক্তি উদ্যোগে কোরআন পড়ার প্রায় ২০০ রেহাল দিয়েছিলেন মানুষকে।

অবাক করা বিষয় হলো, ৯ বছর ধরে শরীরে ক্যানসার বয়ে বেড়াচ্ছেন শাহাদাত। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশ থেকে দূরে থাকেননি তিনি। ফুটপাতে পেঁয়াজ, আলু বিক্রির মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়েছিল শাহাদাতের।

তার অসুস্থ ভাইয়ের মৃত্যুর পর অপর ভাইয়ের দোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন শাহাদাত। সেখান থেকেই মা-বোনের খরচ চালাতেন। একপর্যায়ে নলছিটি খাসমহল বাজার এলাকায় নর্দমার পাশে রাস্তায় আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেন। বর্ষায় পানিতে বহুবার আলু ও পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে তার। তবু মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে এগিয়ে গেছেন।

বিয়ে করেছেন প্রায় ১০ বছর আগে। তিন সন্তানের বাবা এখন শাহাদাত। ২০১৩ সালে থাইরয়েড ক্যানসার ধরা পরে তার। এ পর্যন্ত ভারতের চেন্নাইতে কেমো-থেরাপিসহ চিকিৎসা নিয়েছেন কয়েকবার। শাহাদাতকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রায়ই চিকিৎসা ফলোআপে যেতে হয়। জীবনের বাকি সময় ভালো পথে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। জীবনের গল্পগুলো বলতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেলেছেন।

শাহাদাত বলেন, মৃত্যুকে অনেকবার দেখেছি। তাই আমার চাহিদা সীমিত। টাকার প্রতি আগ্রহ কম। আল্লাহ রিজিক যা রেখেছেন, তা আমি ভোগ করে যাব। অনেক পাইকারি ক্রেতার কাছেও কম মূল্যে দিয়ে অনুরোধ করেন সাধারণ মানুষের কাছে একটু কম লাভে বিক্রি করতে। সব ব্যবসায়ীকে তার মতো উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান শাহাদাত।

শাহাদাতের প্রশংসা করে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পবিত্র রমজান মাস ও করোনার সময় শাহাদাত ফকিরের এ উদ্যোগ মানুষকে অনেক স্বস্তি দেবে। যেখানে সবাই সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সেখানে তিনি কমিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন গত বছরের মতো এবারও।

এনএ