সূর্যমুখীর হলুদ ফুলে ঢাকা পড়েছে পুরো বাগান। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির দল। আর এমন দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন হাজারো দর্শনার্থী। সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য মোহিত করে তুলেছে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে।

পাবনার বেড়া উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গ্র্যাজুয়েশন করা আলভী সজীবের এমন উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

উপজেলার বৃশালিখা গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চারপাশ ঘেরা বাগানের দক্ষিণে করা হয়েছে গেট। কোমলমতি শিশুরা পালন করছে টিকিটের দায়িত্ব। গেটে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এই টিকিটের মূল্যের একাংশ ব্যয় করা হবে এতিম ও অসহায় শিশুদের কল্যাণে। বাগানের ভেতরে রাখা হয়েছে বসার ব্যবস্থা। ফটোশেসনের জন্য করা হয়েছে লাভ চিহ্নের 'হার্টশেপ'। সম্পূর্ণ বাগান একনজর দেখার জন্য করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ারও।

প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও এলাকার নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফি তুলছেন, কেউ আবার ফুলের সৌন্দর্যের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছেন। সব মিলিয়ে ফুলের সৌন্দর্যে পর্যটকরা যেন ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যাচ্ছেন এক অপার্থিব আনন্দলোকে। দর্শনার্থীদের মুখেও যেন ছড়িয়েছে সূর্যমুখীর হাসি।

দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদন দান করেছে এই উদ্যোক্তার নেওয়া কিছু পদক্ষেপও। বাগানের ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য ছবি তোলা ও সাময়িক বিশ্রামের জন্য কয়েকটা বসার ব্যবস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক লাভ আকৃতির ফটোসেশন জোন এবং উঁচু ওয়াচ-টাওয়ার।

উদ্যোক্তা আলভীরের দাবি, অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছে, ভবিষ্যতে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশেই থাকবে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বেড়া উপজেলার বৃশালিখা গ্রামে সূর্যের মতো হাসি দেওয়া হলুদ গালিচা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা। তাদের কেউ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় নিজেদের সেলফি তুলছেন। কেউ আবার প্রিয় মুহূর্তকে মোবাইল ফোনের ভিডিওতে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে রাখছেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভ গ্রহণ করে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন বিনোদনপ্রিয় পর্যটকরা।

বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন সুমাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় তেমন দর্শনীয় স্থান নেই। তাই মাঝেমধ্যেই আমরা এখানে ঘুরতে আসি। বাগানটা খুবই সুন্দর। আমাদেরও অনেক ভালো লাগছে। ঘুরছি, ফিরছি, ছবি তুলছি, বেশ মজা করছি।

পরিবার নিয়ে আসা তাহসিনা রায়হান বলেন, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো অনেকেই পরিবার নিয়ে আসছি। আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছি। সুর্যমূখী ফুল দেখে খুব ভালো লেগেছে। এখানে ঘুরতে এলে মানুষ নিরাশ হবে না। এই ফুল থেকে আবার তেল তৈরি হয়। এই তেল খুব দামি। একই সঙ্গে তেল ও ফুল দুটোই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।

বাগানমালিক আলভী সজীব জানান, গতবার করোনাকালী কলেজ বন্ধ থাকায় অলস বসে ছিলাম। কিছু করার চিন্তা থেকে ছোট করে সূর্যমুখী বাগান করেছিলাম। বেশ সাড়াও পেয়েছিলাম। গতবার সফলতা পাওয়ায় এবার বেশ কিছু জায়গাজুড়ে বাগান করেছি। এবারের বাগান থেকে আয়ের বড় অংশ ব্যয় করা হবে এতিম ও অসহায় শিশুদের কল্যাণে।

তিনি জানান, গত বছর ২৮ শতাংশ জায়গায় সুর্যমূখী চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন হয়েছিল। এবার প্রায় ২.৫ (আড়াই) বিঘা নিয়ে বাগান করা হয়েছে, যেটা ব্যক্তি উদ্যোগে পাবনা জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সূর্যমুখী বাগান। জমি চাষে আমাদের প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে অনেক ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারব। 

এক কানি (৩০ শতাংশ) জমিতে সরিষা চাষ করতে যেমন তেল হয়, সূর্যমুখীতেও তাই হবে কিন্তু সূর্যমুখীর খরচ কম ও রোগবালাই কম হয়। তেল বিক্রি করে লাভবান হলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে প্রজেক্ট আকারে চাষ করব ও জায়গার পরিমাণ বাড়াব, সেই সঙ্গে স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম চাষ করব, এমনটা জানান আলভী।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, মাঠপর্যায়ে সূর্যমুখী চাষে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় তরুণ উদ্যোক্তাদের সার-বীজ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। আলভীকেও সহায়তা করা হয়েছে। আগামী এমন তরুণকে আমরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সূর্যমুখী তেল হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এ ছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। তাই সূর্যমুখী তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণ ও ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে ভোজ্যতেলের যে ঘাটতি রয়েছে, সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

এনএ