উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনায় ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন। এরই মধ্যে নদীর চর এলাকায় পানির নিচে ডুবে থাকা কাঁচা-পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অপরদিকে, ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মেরামত শুরু করেছেন এলাকাবাসী। 

গতকাল শনিবার (২ এপ্রিল) ইটনার জিওলের হাওরে দেখা গেছে, কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করছেন। যে ধানগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে সেগুলো এখনও পুরো পাকেনি। 

বোরো ধান ঘরে তোলার আগেই উপজেলার কয়েকশ কৃষকের কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। ইটনা হাওরের মাঠে মাঠে এখন কৃষকদের হাহাকার চলছে। চোখের সামনে শত শত বিঘার ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সেই ফসলের কিছুটা ঘরে তুলতে আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। নৌকা নিয়ে তলিয়ে যাওয়া সেই ধানগুলো কেটে আনতে চেষ্টা করছেন তারা।

কৃষি বিভাগ জানায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার চেরাপুঞ্জি শহরে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীর পানি বেড়ে গেছে। সেই পানি প্রবল বেগে সুনামগঞ্জে ঢুকছে। এরপর নদী দিয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা হাওরে প্রবেশ করছে। 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ইটনা উপজেলার হাওরের প্রায় ২০০ একর জমির বোরো ধান পানিতে নষ্ট হয়েছে। তবে এখনও 
বিস্তীর্ণ হাওরে পানি প্রবেশ না করলেও পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর পারের চরাঞ্চলের ফসলগুলো।

স্থানী কৃষক আবুল হাসিম বলেন, ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে ধান লাগিয়েছি। সেই জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। যে ধানগুলো তলিয়ে গেছে তা এখনও পাকেনি। তাই কাঁচা ধান কাটতে চেষ্টা করছি।

কৃষক সমির আলী জানান, এখনও ধান কাটার মতো অবস্থা হয়নি। হঠাৎ করে পানি আসায় ধান তালিয়ে গেছে। তাই সকাল থেকে শ্রমিক নিয়ে কাঁচা ধানই কাটার চেষ্টা করতেছি। পাশাপাশি এলাকার লোকজন নিয়ে বাঁধ মেরামতেরও কাজ চলছে।

ইটনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান শফিকুল ইসলাম সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল রক্ষা বাঁধে কিছুটা ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই এলাকার লোকজন নিয়ে আমরা নিজেরাই বাঁধ মেরামত করছি।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম আলামিন জানান, ইটনা উপজেলায় আনুমানিক ২০০ একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই ধান চাষিরা কাটছে। ধানগুলোর প্রায় ৮০ ভাগ পেকে গেছে। ইটনাসহ কিশোরগঞ্জে তিনটি হাওর উপজেলায় এবার ১ লাখ ৪ হাজার মেট্রিকটন বোরো ধান আবাদ হয়েছে।

এসকে রাসেল/এমএএস