শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্নাতকোত্তর পাস করা সেই শাহিদা খাতুন অবশেষে কর্মস্থলের ঠিকানা পেলেন। নতুন করে শুরু হলো তার জীবন। বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার সহযোগিতায় আকিজ গ্রুপে পাওয়া চাকরিতে যোগদান করেছেন তিনি। 

রোববার (৩ এপ্রিল) যশোরের অভয়নগরে আকিজ জুট মিলে অ্যাডমিন বিভাগের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন অদম্য এই মেধাবী।

দুটি পা ও একটি হাত না থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুনের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। মুদি দোকানি রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে শাহিদা চতুর্থ। দুটি পা আর একটি হাত না থাকলেও সচল বাকি একটি হাত দিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখেন শাহিদা। 

প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করেন এলাকায়। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী শাহিদা প্রবল ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে ২০১৫ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি শাহিদা হ্যান্ডিক্রাফট, সেলাইসহ বিভিন্ন হাতের কাজও করতে পারেন।

শাহিদা নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য এগিয়ে যান। বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা। এখানেই প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা আর নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলছেন আত্মকর্মসংস্থান। এক সময় প্রতিবেশীরা শাহিদার জন্মকে ‘পাপের ফল’ বলতেও কার্পণ্য করেনি। তবে আজ তারাও শাহিদাকে মেনে নিয়েছেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। যেকোনো দরকারে ছুটে যান তারা শাহিদার কাছে। 

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পাওয়ায় হতাশ ছিলেন শাহিদা। এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শাহিদাকে নিয়ে প্রকাশিত এসব সংবাদ পুনাকের সভানেত্রী জীশান মীর্জার নজরে আসলে তার আন্তরিক উদ্যোগে জেলা পুলিশ শাহিদার বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করে। 

২২ ও ২৩ মার্চ যশোর জেলা পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যশোর আসলে বুধবার জেলা পুনাক নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে শাহিদার বাড়িতে গিয়ে তার হাতে যশোরের নওয়াপাড়াস্থ আকিজ জুট মিলে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।

এই নিয়োগপত্র নিয়ে রোববার (৩ এপ্রিল) সকালে যশোরের অভয়নগরে আকিজ জুট মিলে এডমিন বিভাগের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন অদম্য শাহিদা খাতুন। এ সময় শাহিদার বড় ভাই কলিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। চাকরিতে যোগদানের পর শাহিদা খাতুন আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেখ নাসির উদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘চাকরি পেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই চাকরির সুবাদে আমি বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারব। প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে পারব। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন।’

এ ব্যাপারে আকিজ জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক শেখ আব্দুল হাকিম বলেন, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সেখ নাসির উদ্দিনের নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবন্ধী নিয়োগ কোটায় শাহিদা খাতুন এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেছেন। কর্মক্ষেত্রে সকল কাজে তিনি আমাদের সহযোগিতা পাবেন।

জাহিদ হাসান/আরআই