মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে হেলিকপ্টারে করে বউ আনবে। আর ছেলেও সেই ইচ্ছে পূরণ করতে হেলিকপ্টারে বিয়ে করে বউ এনেছেন। বিয়ের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের মেরুল্যা গ্রামে। 

বর আবু আহম্মেদ আশরাফ সবুজ (৩০) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ, এমবিএ করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাবা আনিছুর রহমান পেশায় একজন কৃষক।

কনে তাসলিমা আক্তার তমা (১৮) জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের তমিজ উদ্দিনের মেয়ে। তমা মান্দা মমিন শাহানা সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা একজন ব্যাটালিয়ন।

জানা গেছে, জেলার মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। আত্রাই নদীর পূর্বপাড়ে বরের বাড়ি আর পশ্চিমপাড়ে কনের বাড়ি। বর-কনের বাড়ির দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ৫ কিলোমিটার আর আকাশ পথে ৫ মিনিট।

দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে নিয়ে আলোচনা ও দেখাদেখির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পরে মা-বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে হেলিকপ্টারে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। নির্ধারিত দিনে হেলিকপ্টার মান্দা এস সি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে রাখা হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে ৫ কিলোমিটার দূরে কনের বাড়িতে যায়। সন্ধ্যার আগেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবারো হেলিকপ্টারে চড়ে বউ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বর-কনের বাড়িতে আশপাশের হাজার-হাজার উৎসুক জনতা হেলিকপ্টার দেখার জন্য ভিড় করে। হেলিকপ্টারে বিয়ে করায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। তাদের বিয়ের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানায়, মানুষের শখ বা ইচ্ছার শেষ নেই। কারও শখ মাটির থালায় ভাত খাওয়া আবার কারও কাসার থালায়। আগে মানুষ গরু-মহিষের গাড়ি চড়ে বিয়ে করেছে। এখন তা অতীত। এখন মানুষ হেলিকপ্টারে বিয়ে করছে।আশপাশের কোনো গ্রামে হেলিকপ্টার নিয়ে বিয়ে করতে যাওয়ার ঘটনা হয়নি। এই প্রথম কেউ হেলিকপ্টার ভাড়া করে বিয়ে করছে। 

বর আবু আহম্মেদ আশরাফ সবুজ বলেন, বাবা-মা ইচ্ছা পোষণ করেছিল আমাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে বিয়ে করতে যাবেন। তাদের শখ পূরণ করতে হয়েছে। তারাও হেলিকপ্টারে উঠতে পেরেছে। এতেই আমি খুশি। 

সবুজের বাবা আনিছুর রহমান বলেন, আমার দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে বড় ও ছেলে ছোট। আমাদের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করানোর। আগে থেকে মেয়ে দেখেশুনে দুই পরিবারে দিন ঠিক করা ছিল। আমাদের ইচ্ছা পূরণ করেত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। শনিবার দুপুরে কনের বাড়ি যাওয়া এবং বিয়ের কাজ শেষে আবারও সন্ধ্যার আগেই বউ নিয়ে ফিরে আসা হয়। টাকা হয়ত কিছু খরচ হয়েছে, তবে শখ পূরণ হয়েছে।

কনের বাবা তমিজ উদ্দিন বলেন, আমার দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে বড় ও মেয়ে ছোট। আল্লাহর রহমতে বিয়ের অনুষ্ঠান ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দুই লাখ টাকা কাবিন করা হয়েছে।  তিনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

দেলোয়ার হোসেন/এসপি