কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মমেনা বেওয়া (৭০) এবং একই উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোবনদহ গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিউলি বেগমের (৩৩) পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠন ‘এক বেলা আহার’।

রোববার (৩ এপ্রিল) দুজনের বাড়িতে গিয়ে হাতে হাতে সহায়তার অর্থ পৌঁছে দেন এক বেলা আহার সংগঠনটির সেচ্ছাসেবকরা। দুই পরিবারকে ৫০ হাজার করে মোট এক লাখ টাকা নগদ অর্থ প্রদান করেন তারা। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এক বেলা আহারের সমন্বয়করী মোহাম্মদ রেদোয়ান আতিক, এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী স্বেচ্ছাসেবক ফজলুর রহমান রুবেল, ঢাকা পোস্টের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জুয়েল রানাসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত ৪ জানুয়ারি ‘ছেলে কত কী বাজার করে, বউকে নিয়ে খায়, আমাকে দেয় না’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গত ১০ জানুয়ারি ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিউলির জীবনজুড়েই অন্ধকার’ শিরোনামে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ দুটি সংবাদ নজরে পড়লে তাদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ‘এক বেলা আহার’।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার পর বাবাহীন পরিবারে মা অতিকষ্টে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনোরকমে বড় করেন দৃষ্টিহীন শিউলিকে। বিয়ের পর সুখে-শান্তিতে চলছিল শিউলির সংসার। ১০ বছরের সংসারজীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের মা হন শিউলি। কিন্তু স্বামী শাহআলম ডিভোর্স দিলে উপায়ান্তর না পেয়ে চলে আসেন বৃদ্ধা মায়ের বাড়িতে। তারপর দুই সন্তান নিয়ে শুরু হয় নতুন সংগ্রাম।

এদিকে ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন মমেনা বেওয়া। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভিক্ষা করে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছেন। মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ছেলে কাশেম আলী মাকে দেখভাল করেন না। ফলে এই বয়সেও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন মমেনা বেওয়া।

এক বেলা আহারের অর্থসহায়তা পেয়ে বৃদ্ধা মমেনা বেওয়া বলেন, ‘আগোত তো মোর বেটা-বউ আলাদা খাইছে। সাংবাদিক মোর ছবি নিয়া যাওয়ার পর থাকি একসাথে খাই এলা। আজ ঢাকা থাকি লোক আসি মোক মেলাগুলা টেহা (টাকা) দেইল। যত দিন আল্লাহ বাঁচি আখবে, তদ্দিন দোয়া করিম ওমারগুলার জন্যে।’

দৃষ্টিহীন শিউলি বেগম বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই যে কেউ আমাকে এতগুলো টাকা কেউ দিবে। টাকা পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আজ বাজার করে মা ও ছেলে-মেয়েকে পেট ভরে খাওয়াব। যারা আমার এত বড় উপকার করল, তাদের সারা জীবন ভুলতে পারব না। এবং তাদের জন্য দোয়া করব আজীবন।’

এক বেলা আহারের সমন্বয়করী মোহাম্মদ রেদোয়ান আতিক বলেন, এক বেলা আহার একটি ফেসবুক ভিত্তিক সামাজিক ও মানবিক গ্রুপ। সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামান্য সহায়তার চেষ্টা করে তারা। বিশেষ করে খাবারের কষ্ট থেকে মানুষকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে চায় এ সংগঠন। সেই অবস্থান থেকেই মমেনা বেওয়া ও দৃষ্টিহীন শিউলি বেগমের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। এটা খুবই ছোট উদ্যোগ। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে এসব মানুষের দুঃখ-কষ্ট অনেক খানি লাঘব করা সম্ভব হতো।

মো. জুয়েল রানা/এনএ/জেএস