দুই বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপে বন্ধ থাকার পর ফের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিহু উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। সোমবার (০৪ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও মেলার মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা হয়। 

রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করা হয়। শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধানসহ বিভিন্নভাবে নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন।

এ সময় বৈসাবি মেলার উদ্বোধন করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেনাবাহিনীর ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। 

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে মেলাস্থলে স্থাপিত বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন দ্রব্য, অলংকার ও বস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু নামে পালন করা হয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণে বৈসাবি এক বৈচিত্রময় রূপ ধারণ করেছে। এটা মূলত পুরোনো বছরকে বিদায় দেওয়া আর নতুন বছরকে বরণ করার জন্য পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীদের উৎসব। এই উৎসব বয়ে আনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। থাকে না কোনো হিংসা-বিদ্বেষ। বৈসাবির আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। 

রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বৈসাবি উৎসব। মেলায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কাপড়সহ নানা সামগ্রীর স্টল বসানো হয়েছে। এছাড়া পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, চাকমা নাটক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত, উভগীত, গেংখুলী গীত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসবসহ বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

মিশু মল্লিক/আরএআর