সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে রক্ষা পেল মেঘনা হাওরের ২৫ হেক্টর জমির কাঁচা ধান। বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছয়জন শিক্ষক ও ৬০ জন শিক্ষার্থী ধসে যাওয়া বাঁধের সংস্কার কাজ করেন। এতে রক্ষা পেয়েছে মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের মেঘনা হাওরে প্রায় ৩০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ২৫ হেক্টর জমির ধান পাকতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। 

এদিকে গত কয়েকদিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের একাধিক বাঁধ। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এরই মাঝে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাতে মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়ে। রাত থেকেই স্থানীয় কৃষকরা বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসার পর সবাই মিলে বাঁধ সংস্কারের কাজে যোগ দেন। বস্তায় মাটি ভরে ভেঙে যাওয়া অংশে মেরামত করেন শিক্ষার্থীরা।

মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জয় দে ও অলক তালুকদার বলেন, আজ সকালে কলেজে যাওয়ার পর স্যারেরা বলেন- ‘বাঁধের অবস্থা খারাপ, সবার সঙ্গে মেরামতের কাজ করতে হবে। কৃষক ভালো থাকলে, দেশ ভালো থাকবে।’ আমরাও নৌকা দিয়ে চলে গেলাম বাঁধে। এ কাজে যুক্ত হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। 

এ বিষয়ে মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বিজন কুমার তালুকদার বলেন, গতকাল রাতে মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে যায়। আজ সকালে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আসার পর সবাই মিলে বাঁধ সংস্কারের কাজে গিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একা নয়, সবাই মিলে ভালো থাকার নামই জীবন। এই বোধটা আজকের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারল। পানি যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে মেঘনা হাওরটি ডুবে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের চেতনা সারাজীবনের জন্য কাজে লাগল।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, এই দুর্যোগকালে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছি আমরা। অনেকে বাঁধ মেরামত কাজে যোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই মহৎ কাজে উৎসাহ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

সাইদুর রহমান আসাদ/আরএআর