মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারত পর্যটন ভিসা চালু করেছে সরকার। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে পর্যটন ভিসা চালু হলেও, এখনো সিদ্ধান্ত মেলেনি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন এ ইমিগ্রেশন দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়ায় পর্যটকরা।

জানা যায়, দেশের শেষ প্রান্তের জেলা পঞ্চগড়ে অবস্থিত দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু স্থলবন্দর হয়ে ভারতে যাতায়াত করেন। শুধু বেড়াতেই নন, উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষের আত্মীয়স্বজনের বসবাস ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িসহ ভারতের আশপাশের জেলায়।

ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান শিলিগুড়ি, সিকিম, গ্যাংকটক, দার্জিলিং, নেপাল ও ভুটান এ স্থলবন্দর থেকে কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ স্থলবন্দরটি।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষদের মধ্যে যাতায়াত। পরবর্তীতে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা সরকার চালু করলেও বন্ধ থাকে পর্যটন ভিসা। ফলে করোনাকালে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত ১৫ নভেম্বর থেকে ভাতের পর্যটন ভিসা চালু করা হয়। তবে সেটা ছিল শুধু আকাশপথে।

দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত ৩০ মার্চ থেকে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে পর্যটন ভিসার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে অনুমতি কিংবা পর্যটন ভিসার সিদ্ধান্ত মেলেনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের। ফলে চরম পড়েছে পর্যটন ভিসাধারীরা। অনেকের শেষ হয়ে যাচ্ছে পাসপোর্টের মেয়াদও।

অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেলে একদিকে যেমন দূরত্ব বেশি, তেমনি অপচয় হয় সময়। এমনকি গুনতে হবে কয়েক গুণ খরচ ৷ স্বল্প খরচে ও দ্রুত সময়সহ সহজে ভারতে যাওয়ায় যায় এ বন্দর দিয়ে। তাই দ্রুত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে পর্যটন ভিসা চালুর দাবি জানিয়েছেন উপকারভোগী ও স্থানীয়রা।

এদিকে বন্দর দিয়ে নতুন করে বিজনেস ভিসার আবেদনও করতেও নানা জটিলতার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া স্বজনদের পর্যটন ভিসা করে ভারতে রোগীদের সঙ্গে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু ভিসা চালুর অনুমতি না হওয়ায় চরম বিপাকে পড়ছেন তারা। এ বন্দর দিয়ে টুরিস্ট ভিসা চালু হলে যেমন কমবে দুর্ভোগ, তেমনি সরকার পাবে রাজস্ব।

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির নামের এক পাসপোর্টধারী যাত্রী বলেন, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলানায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম, গ্যাংকটকসহ নেপাল ও ভুটান কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর সরকার দুই বছর পর পর্যটন ভিসা চালু করলেও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। 

ফারুক হোসেন নামে আরেক পাসপোর্টধারী যাত্রী বলেন, আমার জানামতে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসার চেয়ে পর্যটন ভিসায় বেশির ভাগ মানুষ ভারতে গমন করেন। কিন্তু সরকার পর্যটন ভিসার চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে বন্ধ রেখেছে। এ ইমিগ্রেশন চালু না হওয়ায় আমাদের কয়েক শ কিলোমিটার ঘুরে আখাউড়া ও বেনাপোল স্থলবন্দরে টুরিস্ট ভিসা করে ভারতে যেতে হবে। এতে একদিকে যেমন গুনতে হবে কয়েক গুণ বেশি খরচ, তেমনি এতে বাড়বে সময় অপচয় ও দুর্ভোগ। 

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে দুই বছর ধরে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনসহ সব ইমিগ্রেশনে পর্যটন ভিসা বন্ধ ছিল। সরকার তা আবার চালু করলেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশনা পাইনি। যদি সরকার ভিসা চালু করে, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা জানামতে সরকার বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে টুরিস্ট ভিসা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে টুরিস্ট ভিসার চালুর বিষয়ে এখনো প্রশাসনিকভাবে আমাদের কাছে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

মো. রনি মিয়াজী/এনএ