ভরা চৈত্রে হঠাৎ উজানের পানি ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজের উজানে ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অসময়ের এই পানিতে তলিয়ে গেছে রংপুরসহ তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। ৪ দিন ধরে হাঁটু পানিতে ডুবে আছে চরাঞ্চলের উঠতি ফসল।  

উজানে পানি বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা ব্যারেজের ৬টি জলকপাটও খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলের দিকে পানি আরও বেড়েছে। এসব এলাকার নদীর পাশে বা নদীর মাঝে চরাঞ্চলে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গত ৪ দিনে ৮৩ সেন্টিমিটার বা আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আর কোনো বৃষ্টিপাত না হলে দুই-একদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে রংপুরের তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন কৃষক। একইভাবে শঙ্কিত কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলের চাষিরা। তারা এই সংকট কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না।

গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অনেক জায়গায় ভুট্টা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বে।

কাউনিয়া উপজেলার চর এলাকার উঠতি ফসল কাউন, মরিচ-পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, গম, ধান, তামাক ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের দেড় হাজার একর জমির ফসল এখনো পানিতে ডুবে আছে। উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, চৈত্র মাসে হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ছয় একর জমির ধান, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন ও বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে।

কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে ৪ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সেচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু আকস্মিক উজানের পানি ঢুুকে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানিয়েছেন, তিস্তায় ৮৩ সেন্টিমিটার বা আড়াইফুট পানি বেড়েছিল, সেটি এখন কমতে শুরু করেছে। আর কোনো বৃষ্টিপাত না হলে দুই-তিন দিনের মধ্যে এ পানি নেমে যাবে।

তিনি আরও জানান, তিস্তার ভারত এবং বাংলাদেশের উজান অংশে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নীলফামারীর জলঢাকা, ডোমার, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে ২৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই