দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জিকু মিয়া

জন্ম থেকেই আমি অন্ধ (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী)। দুই চোখে দেখি না। নিজের জায়গা-জমি কিছুই নেই। থাকি সরকারি জায়গায়। অন্ধ বলে কেউ আমারে কাজ দেয় না।

এভাবেই দুর্বিষহ জীবন সংগ্রামের কথা জানালেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের সাহতা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জিকু মিয়া (৩০)।

তিনি বলেন, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে আমার পরিবার। ঝুপড়ি ঘরে বসবাস। মানুষের দান ও সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়ে চলে সংসার। সংসারে অভাব থাকায় মেয়েকে নিয়ে গার্মেন্টসে কাজে চলে গেছে স্ত্রী। এখন আমি বাড়িতে একা থাকি। বউয়ের কামাই দিয়ে চলি।

জিকু মিয়া বলেন, আমি জন্ম থেকেই অন্ধ। আট বছর আগে গ্রামের কয়েকজন যুবক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আমার চোখ অপারেশন করে দিয়েছিল। অপারেশনের পর থেকে ঝাপসা দেখতাম। কিন্তু এখন আবার আগের মতোই অবস্থা।

তিনি বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে খেতে আর ভালো লাগে না। কাজ করে খেতে মন চায়। কয়েকদিন কাজও করেছি। কিন্তু পরে সবাই বলে আমারে দিয়ে কাজ হবে না। এজন্য সাত বছরের মেয়ে জেনি আক্তারকে নিয়ে গত বছর গাজীপুরের শ্রীপুরে চলে যায় স্ত্রী মারুফা আক্তার। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয় স্ত্রী।

আক্ষেপ করে জিকু মিয়া বলেন, এলাকার অনেক গরিব মানুষ এবার সরকারি ঘর পেয়েছে। আমিও একটা ঘর চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। আমি একটা ঘর পেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতে পারতাম।

ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন জিকু মিয়া

জিকু মিয়ার স্ত্রী মারুফা আক্তার বলেন, আমার স্বামী দু’চোখে দেখেন না। এজন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় তাকে বাড়ি রেখে মেয়েটাকে নিয়ে আমি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছি। স্বামীর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে। আমি চাকরি করে যা পাই তা খাওয়া-দাওয়াই শেষ হয়ে যায়। কিছুই জমাতে পারি না। আমাদের জায়গা-জমি নেই। ভাঙা ঘরে থাকি। বৃষ্টি এলে পানি পড়ে, শীতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে বাতাস ঢোকে। নিজেরা কীভাবে চলব, মেয়েকে কীভাবে মানুষ করব- এসব ভেবেই কূল পাই না। আমরা একটা সরকারি ঘর চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নেত্রকোনায় এ পর্যন্ত ৯৬০ জন গৃহহীনকে সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বারহাট্টা উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ৪৫টি ঘর।

সাহতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফারুক মিয়া বলেন, জিকু মিয়া অসহায় জীবনযাপন করছেন। আমি তাকে কয়েক বছর আগে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দিয়েছি। সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য ইউএনওকে বার বার অনুরোধ করেছি। এরপরও জিকু মিয়া সরকারি ঘর পাননি।

মেম্বার ফারুক মিয়া বলেন, জিকু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কাজে নেয় না কেউ। দু’চোখে ঠিকমতো না দেখায় কাজ দিলেও করতে পারে না। এজন্য মানবেতর জীবনযাপন করছে জিকু। অসহায়ত্বের কথা ভেবে জিকুকে সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ জানাই।

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মোর্শেদ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জিকু মিয়া সম্পর্কে আমার জানা নেই। তিনি সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন কিনা তাও জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। জিকু মিয়া যোগাযোগ করলে সরকারি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

মো. জিয়াউর রহমান/এএম