ভুট্টা চাষে খুব কম সময়ে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ভুট্টা অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে কম পরিচর্যা ও সেচ খরচে ভালো ফলন হয়। আবার ভালো দাম পাওয়া যায় বলে দিন দিন ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে ধারাবাহিক উৎপাদনও বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এ চিত্র পাওয়া যায়।

জয়পুরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষ বেড়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ১০৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ বেশি হয়েছে। এ ফসল উৎপাদনে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে লাভের পরিমাণও বেশি থাকে। তাই চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকরা ভুট্টা বেশি আবাদ করেছেন। আবার অনেক কৃষকই তাদের ফসলি জমিতে নিয়মিতভাবে ভুট্টা চাষ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় গত মৌসুমে ৭৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এবার ৮৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ১০৫ হেক্টর জমিতে বেশি। জেলায় এবার ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। জেলার কৃষকরা এন কে ৪০, সুপার সাইন ২৭৬০, প্যাসিফিক ৯৮৪ জাতের হাইব্রিড ভুট্টা বেশি চাষ করেছে।

সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর, ক্ষেতলাল ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে ভুট্টা আসতে শুরু করেছে। কৃষকরা নিয়মিত ভুট্টা খেত পরিচর্যা করছেন। সময়মতো সেচ, সার দিচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, এ বছর রোগবালাই কম হওয়ায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম ভালো থাকলে লাভবান হবেন তারা। আবার একদিকে বাজারে ভুট্টা বিক্রি, অন্যদিকে মুচি ও ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে এক ভুট্টা চাষে কৃষকরা ত্রিমুখী লাভ করবেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিক সময়ে বীজপ্রাপ্তি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও কৃষি অফিসের দিকনির্দেশনা অব্যাহত থাকায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ভালো ফলন হলে ২২ থেকে ২৬ হাজার টাকা বিক্রি সম্ভব। এতে খরচ বাদে বেশির ভাগই লাভ থাকে।

ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর পৌলঞ্জ গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় আলু আর ধান চাষ বেশি হয়। কিন্তু আমি এবার ৩৩ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। কারণ, বাড়িতে আমার পাঁচটি গরু আছে। বাজারে গরুর খাদ্যের দামও বেশি। তাই যেসব ভুট্টা চাষ করেছি। এর কিছু বিক্রি করব আর বাকি ভুট্টা গরুকে খাওয়াব।

একই উপজেলার ভুয়াপুকুর গ্রামের কৃষক এবাদুর রহমান বলেন, আমি ৩৩ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টায় কম খরচে লাভ বেশি হয়। আর কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার সবই দিয়েছে। এতে লাভ আরও বেশি হবে। বর্তমানে গাছে গাছে ভালো ভুট্টা হয়েছে। কিন্তু কিছু দিন আগে ঝড়ের হালকা বাতাসে অনেক গাছ হেলে গেছে। এতেও ফলন ভালো হওয়ার আশা তার।

সদর উপজেলার ধুলাতর গ্রামের কৃষক তারাজুল ইসলাম তার ৩৩ শতক জমিতে বিএডিসি এন কে ৪০ জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ভুট্টা চাষে বীজ, সার, সেচ পরিশ্রম সবই কম লাগে। এখন গাছে গাছে ভালো ভুট্টা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় ভুট্টা চাষে এবার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এবার গতবারের চেয়ে ১০৫ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষকের ভুট্টা বীজ, সার দেওয়া হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবারও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

চম্পক কুমার/এনএ