বরিশালের দুর্গাসাগরে চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথির পুণ্যস্নান ও মেলায় লক্ষাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীর সমাগম হয়েছে। জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক এই দিঘীতে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় এই পার্বণ। তবে বিগত দুই বছর করোনার কারণে পুণ্যার্থীরা মিলতে পারেননি। এবারের তিথিতে বাধ্যবাধকতা না থাকায় বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠেছেন তারা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, শিবের স্ত্রীর একটি অঙ্গ দুর্গাসাগরে পতিত হয়েছিল বলে দুর্গাসগার পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণেই দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহাসিক স্থানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। 

স্বামী সম্ভানন্দ সরস্বতী বলেন, ব্রহ্মপুত্র স্নান উৎসবের একটি অংশ দুর্গাসাগরে প্রায় দুইশ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জগতের মানুষ মাতৃআত্মার পূজা করেছিল এই স্নানের দিনে। চৈত্রের শুক্লা অষ্টমী বা অশোকাষ্টমীতে স্নান করলে মহাপাপ মোচন হয়। তাছাড়া এই তিথিতে গৌরাঙ্গ মাহাপ্রভু মাধবপাশার জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন। এ কারণে আমাদের কাছে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ পুণ্যস্নান।

তিনি আরও বলেন, এত পুন্যার্থীর আগমন ঘটবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। এখানে সাধু-সন্নাসী-ব্রাহ্মণ সবাই এসেছেন।

বিশ্বনাথ ঘোষ বিশু বলেন, ৪০ বছর ধরে আমি নিয়মিত এই স্নানে আসি। গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে স্নান ও মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর আবার অনুমতি পাওয়ায় উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্নান ও মেলা চলছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেই সনাতন ধর্মের মানুষেরা স্নান সম্পন্ন করছি।

মাগুরা জেলার বাসিন্দা হানিফ ফকির নামে একজন বলেন, প্রতি বছরই আমি আসি। এবার এসেছি মা গঙ্গার নামে প্রনাম করে দুই ফোটা জল ফেলে দক্ষিণা ৫০ টাকা দিতে। এখানে স্নান করা আমার ধর্মে (মুসলমান) নেই। কিন্তু আমি এই স্নান ভালোবাসি বলেই দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এখানে আসি। 

পুণ্যার্থী গোবিন্দ সাহা বলেন, আয়োজক কমিটির অগোছালো ব্যবস্থাপনা। এখানে নারী পুণ্যার্থীদের জন্য আলাদা স্নানের ব্যবস্থা করেনি। যে কারলে একই ঘাটে পুরুষ এবং নারীদের স্নান করতে সমস্যা হচ্ছে।

দুর্গাসাগর মেলার আহ্বায়ক দিলীপ কুমার রায় বলেন, অশোকাষ্টমীতে তিথিতে সঙ্গত কারনেই মেলাটি জমে যায়। যেহেতু এই তিথিতে ধর্মীয় অনুসঙ্গ রয়েছে। এ বছর রমজানের কারণে মেলায় দোকানের সংখ্যা কম। এখন পর্যন্ত দেড়শ দোকান বসেছে। 

স্নানের ঘাটের অসঙ্গতির বিষয়ে বলেন, এই তিথিতে স্নানের নির্ধারিত ঘাট একটিই। এই ঘাটে স্নান সেরে মন্দিরে পূজা অর্চনা করেন। এজন্য আলাদা ঘাটের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তবে নারীদের পোশাক বদলানোর জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মেলা ও স্নানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর