মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান বৈসাবি বা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ইতোমধ্যে পল্লিগুলোয় চলছে উৎসবের আমেজ।

আগামী ১৩ এপ্রিল শুরু হবে পাহাড়ি মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। যা চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংগ্রাই শোভাযাত্রা, মিনি ম্যারাথন দৌড়, বুদ্ধস্নান ও মৈত্রী পানিবর্ষণ অনুষ্ঠান। পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রতিবারের মতো এবারও এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এ মনোরম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

‘নতুন আশা আজ নবপ্রভাতে, শিশু-নারীসহ সবাই থাকুক শান্তিতে, বন্ধ হোক যত সহিংসতা, মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা’— এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বান্দরবানের সাতটি উপজেলার লোকজন মেতে উঠেছে তাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই বা বৈসাবি উৎসবে।

উৎসবকে ঘিরে পোশাক কেনাকাটা ও ঘরবাড়ি গোছানোসহ বান্দরবানের পল্লিগুলোয় চলছে প্রস্তুতি। বলতে গেলে চারদিকে এখন সাজ সাজ রব। পুরো পার্বত্য বান্দরবানে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ১৩ এপ্রিল বান্দরবানে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সব সম্প্রদায় উৎসবকে স্বাগত জানাবে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী উৎসব চলবে।

উৎসবের মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানিখেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বুদ্ধমূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, বয়স্ক পূজা ও নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই মূল আকর্ষণ জলকেলি বা মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব। সব পাপাচার ও গ্লানি ধুয়েমুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে ওঠেন এ সময়। এই উৎসব শুধু পাহাড়িরা নয়, বাঙালিরাও নানাভাবে পালন করে থাকেন। সাংগ্রাই উৎসব দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।

মারমা নারী মেসাইংউ মার্মা বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমরা বিগত দুই বছর সাংগ্রাই উৎসবে আনন্দ করতে পারি নাই। এই বছর খুব আনন্দ করব। মৈত্রী পানিবর্ষণের মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করি আমরা। শীতল-ঠান্ডা পানির পরশে সবার মন যেন শীতল হয়ে ওঠে। পানির মাধ্যমে সব ময়লা যেভাবে দূর হয়ে যায়, সেভাবেই যেন আমাদের সবার মনের ময়লাও দূর হয়ে যায়।

বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই বলেন, ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাংগ্রাই উৎসব পালন করতে যাচ্ছি। এ উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এর সূচনা করা হবে। ১৪ এপ্রিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে মিনি ম্যারাথন দৌড়, ১৫ এপ্রিল আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মৈত্রী পানিবর্ষণ এবং খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের এ উৎসবের সমাপ্তি করা হবে। পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতায় আমরা এবার এ উৎসব পালন করব।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান তিনটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে বৈ, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে সা এবং চাকমাদের বিজু থেকে বি। এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে পুরো পার্বত্য অঞ্চলে এটি ‘বৈসাবি’ উৎসব নামে পালন করা হয়।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, বৈসাবি বা বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে উৎসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এনএ