ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে নেকমরদে রাস্তা পার হওয়ার সময় ময়না আক্তার (৪৫) নামে এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মাথা ফেটে গেছে।

রোববার (১০ এপ্রিল) বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হওয়া শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝোড়ো বাতাসে এবং শিলাবৃষ্টিতে মানুষের ঘরের ছাউনিও উড়ে গেছে। বড় বড় শিলার আঘাতে অনেকের ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে।

রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের মহেষপুর এলাকার মরিচচাষি মুকশেদুল জানান, কয়েকদিন পরই মরিচ তোলার কথা ছিল তার। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে দুই বিঘা জমির মরিচ ঝরে পড়েছে। প্রতিবছর মরিচ বিক্রি করেই তিনি সংসারের সিংহভাগ খরচ বহন করেন।

আমবাগানি তৈবুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৩০০ গাছের আমের গুটি ও পাতা ঝরে গেছে। আমি একদম পথে বসে গেলাম। এর আগে ঠাকুরগাঁও সদরের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। সে ধকল না সামলাতেই আবারও শিলাবৃষ্টি আমার সবকিছু সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। বাগানের যেসব গাছে আমের গুটি আছে, তা দিয়ে আর কিছু হবে না।

রাণীশংকৈলের নেকমরদের ভুট্টাচাষি হিরু ইসলাম বলেন, ভুট্টার মাঠ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ভুট্টার মোচাগুলো পাথরের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। গাছগুলো ভেঙে শুয়ে গেছে। আমি সাত বিঘা জমিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি প্রায় তিন লাখ টাকা।

রাণীশংকৈল উপজেলার টাওয়ার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী বলেন, জীবনের প্রথম এমন শিলাবৃষ্টি দেখলাম। এ শিলাবৃষ্টির কারণে আমাদের ঘরের টিনের চালগুলো উড়ে গেছে। এখন ঘরে পানি ভর্তি হয়ে আছে। আমরা ঘরে কীভাবে রাত কাটাব, এটাই এখন চিন্তার বিষয়।

একই গ্রামের লাভলী আক্তার বলেন, আমাদের রুমের ভেতরে এখন পানি। শুধু পানি না, বরফের পানি। শিলাবৃষ্টি পড়ার কারণে আমাদের ঘরের অনেক জিনিসপত্র ভেঙে গেছে। কিছু ফসল আবাদ করেছিলাম, তাও নষ্ট হয়ে গেল। আমরা কীভাবে চলব এখন?

জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, আজকের শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মরিচ, ভুট্টা, আম, লিচুর গুটিসহ আরও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তবে কত হেক্টর জমিতে কী কী ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে মাঠে কাজ করছি আমরা। পরবর্তীতে এর সঠিক হিসাব জানাতে পারব।

এম এ সামাদ/এনএ