প্রায় দেড় যুগ আগে ক্যান্সারের কাছে হেরে গেছেন স্বামী আলাউদ্দিন। তখন কোলে দুই বছরের শিশু কন্যা অন্তরা খাতুন। বছর কয়েকের বড় ছেলে সোহেল রানা।

দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজু বাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর এলাকার রওশন আরা বেগম। হতদরিদ্র রওশন আরা খড়কুটোর মতো ভাসছিলেন। একসময় নিজেই হাল ধরেন সংসারের। অন্যের বাড়িতে শুরু করেন ঝিয়ের কাজ।

অর্থের অভাবে ছেলে সোহেল রানাকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। কিন্তু মেয়ে অন্তরাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন শত কষ্টেও। মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরেছেন সোহেল রানাও। তিনি এখন রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

মা-ছেলের কষ্ট এবার সার্থক হতে চলেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অন্তরা খাতুন মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী এবং চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করেন অন্তরা। সবগুলো পরীক্ষায় পান জিপিএ-৫।

জিপিএ-৫ পেলেও ভালো কোনো কলেজে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি রওশন আরা। বাঘা সরকারি শাহদৌলা কলেজে ভর্তি হন অন্তরা। অবশ্য সেখান থেকেও জিপিএ-৫ পেয়েই উত্তীর্ণ হন তিনি।

মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে- এ খবরে আনন্দিত মা রওশন আরা। কিন্তু ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। রওশনা আরার এ দুঃশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমছে, অদম্য মেধাবী অন্তরার পাশে দাঁড়িয়েছে র‌্যাব-৫। 

রোববার (১০ এপ্রিল) র‌্যাব-৫ এর অধিনায়কের পক্ষ থেকে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন খান অন্তরার বাড়িতে যান। অন্তরার হাতে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তুলে দেন তিনি। 

এ সময় অন্তরা বলেন, আমার পরিবারের পক্ষে ভর্তির টাকা জোগাড় করা কষ্টকর হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর র‌্যাব-৫ আমাকে ভর্তির টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

অন্তরা জানান, প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছেন তিনি। আবার কখনো মায়ের সঙ্গে হাতের কাজও করেছেন। টাকা জমিয়ে পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি সংসারেও খরচ করেছেন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও নিজের ইচ্ছাশক্তি আর সবার দোয়ায় এ পর্যায়ে পোঁছাতে পেরেছেন তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/জেএস