দেশ স্বাধীনের আগেই স্বামী হারিয়েছেন সমিনা খাতুন। এক বছরের একমাত্র মেয়ে সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানকে নিয়ে জীবন চলছিল তার। 

এর মধ্যে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের রোষানলে পড়েন সমিনা। ছাড়তে হয় স্বামীর ভিটেমাটি। এরপর ছোট সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের সন্ধ্যারই গ্রামে ভাইয়ের বাড়িতে। 

সেখানে কোনোমতে ভাইয়ের কাছে একটু জমি নিয়ে খুপড়ি ঘরে থাকতেন তিনি। জীবন চালাতেন অন্যের বাড়িতে কাজ করে। কাজ করেই বিয়ে দেন একমাত্র মেয়েকে। এরপর শুরু হয় একাকীত্বের জীবন। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সেই অসহায় ও গৃহহীন সমিনা খাতুনকে জমিসহ ঘর উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

রোববার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু,বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের হেল্প ডেক্স ও ৫২০টি থানায় গৃহহীনদের একটি করে ঘর হস্তান্তরের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক থানায় একটি হতদরিদ্র পরিবারকে ন্যূনতম এক কাঠা জমি ক্রয় করে আনুমানিক ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ, রান্নাঘর ও টয়লেট বিশিষ্ট একটি গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। 

ঘর পাওয়ার পর সমিনা খাতুন বলেন, স্বামী দেশ স্বাধীনের আগেই মারা গেছে। পরে মোর খুব কষ্ট বেটি ডাক নিয়া। ভাইর বাড়িত আসিয়া থাকিনু মাইনছের বাড়িত কাম কাজ করু। থাকিবার জায়গা ছিলনি। এলা পুলিশ একটা ঘর দিল ভাল করে থাকিবা পারিম। আল্লাহ ওমার ভালো করুক।

সমিনা খাতুনের মেয়ে জমেলা খাতুন বলেন, আমি আমার বাবাকে দেখিনি। বাবা বলে কাউকে ডাকতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে মা আমাকে মানুষ করছে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন চালাই। মামার জমিতে থাকার কারণে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এখন বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘর দিল। মা আমার ভালো একটি ঘরে মরতে পারবে। যারা আমার মাকে এমন একটি ঘর দিলেন আল্লাহ তাদের ভালো করবেন।

রাণীশংকৈল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গিকার কেউ গৃহহীন থাকবে না। সেই অঙ্গিকারকে বাস্তবায়নের লক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রত্যেকটি থানায় গৃহহীনদের একটি করে গৃহ নিমার্ণ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা সমিনা খাতুনের মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারি। জানার পর আমরা তাকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে গৃহ নিমার্ণ করে দেই।

এম এ সামাদ/এমএএস