শহীদ মিনার

মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পার হলেও ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এর ফলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানে না তরুণ প্রজন্ম। 

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এতো বছরেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি বলে মনে করেন সুধীজনেরা।অন্যদিকে, যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে সেগুলোও বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়।

জানা গেছে, বোয়ালমারী উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬টি, কলেজ ৬টি ও মাদ্রাসা ১৭টিসহ মোট ১৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার থাকলেও ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে।

অপরদিকে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২০টি, মাদ্রাসা ৭টি, কলেজ ৪টি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩টিসহ মোট ১০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি কলেজ, ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলেও ৭টি মাদ্রাসার একটিতেও শহীদ মিনার নেই। মোট এ উপজেলায় ৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মিনার।

এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে বঞ্চিত থাকে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে তার মধ্যে কিছু শহীদ মিনার বছরের পর বছর পড়ে থাকে অরক্ষিত অবস্থায়। এসব শহীদ মিনারে কখনও গবাদি পশুর বিচরণ আবার কখনও বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হতে দেখা গেছে।

বোয়ালমারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা সত্যিই দুঃখজনক। এ এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। উপজেলা পরিষদের আগামী সভায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্পর্কে আমি প্রস্তাব রাখব।

আমার উপজেলায় ৭৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। স্বাধীনতার এতোদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় আমিও ব্যথিত। গত সপ্তাহে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলা শিক্ষা স্যার বলেছেন দ্রুত বাকি ৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। আশা রাখছি এ বছরের মধ্যেই এ উপজেলার সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন হয়ে যাবে।

প্রীতিকণা বিশ্বাস, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, আলফাডাঙ্গা

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনার করেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এখনও শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলছে। অবহেলিত এলাকায় যে প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার নেই সেটা খুবই দুঃখজনক। উপজেলা পরিষদের আগামী মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এ উপজেলার প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। আশা রাখছি, চলতি বছরই বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়ে যাবে।

সজল/এসপি