হৃদয় মণ্ডলের ছেলে শ্রেষ্ঠ মণ্ডল

বাবাকে জেলে নেওয়ার পর আমাকে আসামির ছেলে বলে ডাকত। দরজায় এসে লাথি মারত। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যেতাম না। বাবা যে কদিন জেলে ছিলেন সে কদিন স্কুলেও যেতে পারিনি। আজ ২০ দিন পর স্কুলে গিয়েছি। তিনটি ক্লাস হয়েছে। ক্লাস শেষে ফিরে এসেছি। আজ সহপাঠীরা অনেকদিন পর আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। খুব আনন্দ করেছি।

এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিল ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় কারাবন্দী থেকে মুক্ত হওয়া মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ছাত্র শ্রেষ্ঠ মণ্ডল। শ্রেষ্ঠ তার বাবার স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

শ্রেষ্ঠ বলে, বাবাকে জেল থেকে ছাড়া হয়েছে। আমি খুব খুশি। আজকে ২০ দিন পর স্কুলে গিয়েছিলাম। সাড়ে ৮টায় গিয়েছিলাম ১১টার ফিরেছি। আমি সবুজ মামার সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই আমার খোঁজ নিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক ক্লাসে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আজকে আরও বেশি ভালো লাগছে।

সরোজমিনে হৃদয় মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, হৃদয় মণ্ডল জামিন পাওয়ার পর আর বাড়ি ফেরেননি। কারাগার হতে ছাড়া পেয়ে সোজা ঢাকায় গিয়েছেন চিকিৎসা করাতে। ৪/৫ দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন তিনি। তার প্রেসার এবং ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেয়েছে সে তার স্ত্রীর বড় বোনের বাসায় এখন অবস্থান করছেন।

শ্রেষ্ঠ মণ্ডলের মামা বাদল হালদার বলেন, ২০ দিন পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠর মামা সবুজ বাড়ৈ বাড়ি হতে ক্লাসে নিয়ে যায়। ক্লাস শেষে সাড়ে ১১টার দিকে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে আসে। আমার ভাগিনা আজকে খুব খুশি। শ্রেষ্ঠ বাসায় আসার পরে আয়া পাঠিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক খোঁজ নিয়েছিলেন সে বাসায় এসেছে কিনা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, একটা হট্টগোল ‌চলছিল তাই শ্রেষ্ঠ স্কুলে‌ আসতেছিল না।‌ আমি ওর মায়ের কাছে‌ শুনেছি, বাচ্চাটা ছাদের ওপর উঠলে কারা যেন‌ ওরে টিচ‌‌ করেছে এজন্য ‌স্কুলে‌ আসেনি। আমার স্কুলের শিক্ষক সবুজ‌ বাড়ৈকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওকে স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য। শ্রেষ্ঠ স্কুলের প্রথম বয় গত ২০ দিন শ্রেষ্ঠ মণ্ডল ভয়ে ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে স্কুলে আসেনি। 

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। তিনি চাইলেই যেকোনো সময় ক্লাস শুরু করতে পারবেন।

ব.ম শামীম/আরআই