রংপুরের গঙ্গাচড়ায় টাকার বিনিময়ে টিসিবির কার্ড দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। 

অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের নাম আবদুর রউফ (৪৫)। তিনি গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর নাম ফরিদুল ইসলাম। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী। 

পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য শরিফুল ইসলামসহ সাতজনকে আসামি করেছেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার জন্য এলাকার দুস্থ ও গরিব পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ২০০ টাকা করে নেন। এ ঘটনায় গত ২২ মার্চ চেয়ারম্যান আবদুর রউফের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের ফরিদুল ইসলামসহ ভুক্তভোগী চারজন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত আসামিরা বিভিন্ন সময়ে ফরিদুল ইসলামকে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।

ওই অভিযোগের ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) বিকেলে ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করেন। এ সময় তদন্তকারী দলের সদস্যরা অভিযোগকারী ফরিদুলকে ডেকে ঘটনার বিষয়ে লিখিত সাক্ষ্য নিয়ে চলে যান। 

তদন্ত কমিটি চলে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান আবদুর রউফের নির্দেশে তার অনুসারীরা ফরিদুল ইসলামের ওপর হামলা চালান। এক পর্যায়ে ফরিদুলকে টেনেহিঁচড়ে স্থানীয় পীরেরহাট বাজারে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ আহত ফরিদুলকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। 

এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ফরিদুল বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ তার অনুসারী সাতজনের নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। 

রোববার দুপুরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার ও পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ আলী নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিস্তারিত শুনেন। এরপর সোমবার পুলিশ ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগটি থানায় নথিভুক্ত করে। 

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার জানান, গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরে শুক্রবার ইউপি চেয়ারম্যান সাদা কাগজে একটি মীমাংসাপত্র থানায় জমা দেন। এ কারণে অভিযোগটি নথিভুক্ত করতে বিলম্ব হয়েছে। 

দেরিতে হলেও মামলা নথিভুক্ত হওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, টাকার বিনিময়ে টিসিবির কার্ড দেওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে প্রথমে ইউএনওকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এখন মামলা নথিভুক্ত হয়েছে জেনে ভালো লাগছে। কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি চেয়ারম্যানসহ অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করছি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি