‘আমরা নয়ন বন্ডের লোক, কাউকে কিছু বললে তোর খবর আছে’
‘আগামী দুই দিনের মধ্যে ২ লাখ টাকা দিবি। নইলে এই ভিডিও ভাইরাল কইরা দিমু। আর আমরা হইলাম নয়ন বন্ডের লোক। এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তুই এবং তোর পরিবারের কোনো চিহ্ন থাকবে না’। এভাবেই ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বরগুনার সেই আওয়ামী লীগ নেতা।
এই আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে একজন নারী ও কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন হচ্ছিল তার। এক পর্যায়ে যিনি ভিডিও ধারণ করছিরেন তিনি বোরকা পরা ওই নারীকে জুতা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে পেটাতে বলেন। তাৎক্ষণিক তাকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করতে থাকেন ওই নারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি গত শনিবার রাতের। বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি রোড এলাকার একটি বাসায় বসে ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ভিডিওটি গতকাল (১১ এপ্রিল) বিকেলে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
তবে এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ও বানোয়াট বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমের। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার আমি ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বরগুনা সদরে যাই। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টাকা জমা দেওয়া হয়নি। পরে তারাবির নামাজ শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হই। এ সময় দুজন লোক এসে আমাকে বলে আমার এলাকার কোনো এক লোক অসুস্থ্য, আমাকে যেতে হবে। আমি তাদের সঙ্গে রওয়ানা হই। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে আমি যেতে চাইনি’।
‘পরে তারা আমাকে জোর করে ডিকেপি রোডের একটি বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে দেখি আরও কয়েকজন লোক সেখানে। পরে এক বোরকা পরা মহিলা এসে আমাকে জুতা দিয়ে মারতে থাকে। এ সময় সাথে থাকা অন্যরা আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং বলতে থাকে দুই দিনের মধ্যে ২ লাখ টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেব, সময়মতো টাকা না পেলে তোরে ওপরে চালান কইরা দিমু’। আমি তাদের কাউকে চিনি না।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, আমরা নয়ন বন্ডের লোক, এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তোকে ও তোর পরিবারকে শেষ করে দিব।’ এ কারণে ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে আটকে রেখে টাকা লুট করেছে। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য এসব করছে। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানিয়েছি। তাদের নির্দেশক্রমে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নিব’।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য মো. পলাশ বলেন, তাকে (শাহ আলম) কখনো কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখিনি। আমার ধারণা তাকে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওলিউল্লাহ ওলি বলেন, আমি ভিডিওটি দেখেছি। ভিডিওতে যাদেরকে দেখা গেছে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে শাহ আলমের বিরুদ্ধে এর আগে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আসেনি। তার অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরআই