রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের তপিকল হাট থেকে গোপীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ব্রেন্টের বাজার দেড় কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। গত দেড় বছরেও সেই কাজ শেষ হয়নি। অথচ চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। এখন মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সড়কের দূরাবস্থা দূর না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত দক্ষতা ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্পের (প্রভাতী) আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে (১৮৫৪২৪০৬০ নম্বর আইডি) রাস্তাটির প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ১৫৭ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সিনথিয়া-ঐশী এন্ড জেসমিন’ ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ লেসে কাজটি সম্পন্ন করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওই বছরের ৪ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো তা শেষ হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা হয়নি। বর্তমানে ছয় মাস ধরে সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এই রাস্তার রক্ষাকবচ হিসেবে নবনির্মিত ৪০০ মিটার গাইড ওয়ালটি ধসে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালে। যা নিয়ে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে চলছে। একইসঙ্গে সড়কের সীমানায় থাকা বন বিভাগের গাছ না কাটা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এ পরিস্থিতিতে মাটিময় এই সড়ক ধরে চলাচলে কষ্ট বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বালাপাড়া ইউনিয়নের তপিকল হাট থেকে নির্মাণাধীন সড়কটি খানাখন্দে ভরা। প্রবেশ পথে সবেমাত্র মাটি খুঁড়ে সড়কের দুই ধার উঁচু করে রাখা হয়েছে। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ছন্নছাড়া মাটিতে কাদাটে হয়ে যায় সড়কটি। কোথাও কোথাও আবার পানি জমে মাটি নরম পিচ্ছিল হওয়াতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়াও যেন পথচারীদের জন্য দুষ্কর।

তপিকল হাটের কাছে বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, একটা রাস্তার জন্য হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুনেছি তিন-চার মাসের মধ্যে নাকি এই রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করার চুক্তি ছিল। কিন্তু দেড় বছরেও তো কিছুই হলো না। এখন দীর্ঘ ছয় মাস ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এভাবে কাজ শেষ না করে ভঙ্গুর দশায় রাখা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব নুরুল হুদা ওই রাস্তা ধরে বাইসাইকেল নিয়ে হেঁটে হেঁটে ব্রেন্টের বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি টিপ্পনী কেটে বলেন, হামরা কইলে তো দোষ হইবে। কোন মানুষ যে এই রাস্তার কাম পাইছে আল্লায় ভালো জানে। দেড় কিলোমিটার রাস্তায় কাম করতে কয় বছর লাগে বাহে। এই রাস্তা দিয়্যা ছোট-বড় সবারে চলাফেরা করা মুশকিল হয়্যা দাঁড়াইছে। মানুষ অসুস্থ হইলে তাক নিয়্যা এই রাস্তা দিয়্যা হাসপাতালোত যাওয়ায় বিপদ। হাজারো মানুষের কষ্ট হওছে, কায়ো কি হামার দুঃখ-কষ্ট দেখে না? দ্রুত কাম হইলে হামরা কষ্ট থাকি বাঁচি।

তিস্তা নদী বেষ্টিত কাউনিয়ার চরাঞ্চলের অনেক মানুষই এই রাস্তা ধরে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে অনেক দূর ঘুরে তাদের চলাচল করতে হয়। নির্মাণাধীন রাস্তায় মাটি খোঁড়াখুড়িতে গর্ত তৈরি হয়েছে। সঙ্গে নরম ও পিচ্ছিল মাটির সঙ্গে খানাখন্দে পড়ে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। এ কারণে স্থানীয় এলাকাবাসী দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, রাস্তার সীমানায় কিছু গাছ রয়েছে। আমরা বন বিভাগকে গাছগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু বন বিভাগের গাছ কাটার টেন্ডার না হওয়ায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তার রক্ষাকবচ হিসেবে একটি গাইড ওয়াল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু রাস্তা ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের কারণে গাইড ওয়ালটি ধসে পড়েছে। এর দায় তো পানি উন্নয়ন বোর্ড এড়িয়ে যেতে পারবে না।

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর ছোড়া অভিযোগ মানতে নারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব। তিনি দাবি করেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাল খনন করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তার নির্মাণকাজে সীমানা নির্ধারণ না করে ভরাট খাল ঘেঁষে গাইড ওয়াল দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণেই গাইড ওয়ালটি ধসে পড়েছে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই কর্মকর্তা।

আর রাস্তার গাছ কাটা নিয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, রাস্তার কাজের সঙ্গে বন বিভাগের গাছ না কাটার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা জানিও না রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। তবে ওই রাস্তায় বন বিভাগের ৩৮টি গাছ রয়েছে। সেগুলো কেটে ফেলতে অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গাছগুলো কাটা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি