‘চেয়ারম্যান সাইব যদি হামার কামের টাকা বুজি দিলে হয়। হামরা কি আইজ ডালি কোদাইল ধরি ইউএনওর অফিসের সামনোত দাড়াইনো হয়? মাটি কাটার কাম শ্যাষ হবার মেলাদিন হইল। কিন্তু চেয়ারম্যান সাইব হামার কামলার টাকা না দিয়্যা টালবাহানা শুরু করছে। ওজার মাসোত এই টাকার জনতে আর কতো কষ্ট করা নাগবে। হামাক কামের টাকা দ্যাও, হামরাও এই ওজাত একনা ভালো খাবার চাই।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আলম মিয়া। তিনি গ্রামীণ সড়কের মাটিকাটা দলের শ্রমিকদের দলনেতা। সম্প্রতি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ৩ নম্বর কুর্শা ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) প্রকল্পে শ্রমিকদের নিয়ে মাটিকাটার কাজ করেছেন। কিন্তু ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তাদের মজুরির টাকা পরিশোধ করতে টালবাহানা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে ডালি-কোদাল সঙ্গে নিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মাটিকাটা শ্রমিকেরা। এ সময় দ্রুত সময়ের মধ্যে কাবিখা প্রকল্পের সমুদয় মজুরির টাকা প্রদানের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচি প্রসঙ্গে মাটিকাটা শ্রমিকদের দলনেতা আলম মিয়া জানান, কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৩০ জন শ্রমিক কুর্শা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রামনাথ গ্রাম (মাটিয়া জুম্মা) থেকে পীরগাছা উপজেলার সীমানা পর্যন্ত সড়কে টানা ২২ দিন মাটিকাটা কাজ করেছে। প্রতিদিন ৪৫০ টাকা মজুরি হিসেবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক প্রদান করার কথা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হলেও চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তাদের মজুরির টাকা পরিশোধ না করে উল্টো বিভিন্ন অযুহাতে সময় অতিবাহিত করে চলেছেন।

ভুক্তভোগী শ্রমিকদের দাবি, মাহে রমজানে অর্থাভাবে তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন মাটিকাটার কাজ না থাকায় এখন ইফতার ও সেহরিতে পরিবারের জন্য একটু ভালো খাবারও কিনতে পারছেন না তারা। এ কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে তারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে পাওনা টাকা পরিশোধের ব্যাপারে ইউএনওর হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ঢাকা পোস্ট বলেন, শ্রমিকদের সর্দারের সঙ্গে ৪টি সড়কের মাটিকাটা, বৃক্ষরোপণ ও ঘাসকাটা নিয়ে মৌখিক চুক্তি করেছিলাম। ইতোমধ্যে ৩টি সড়কের কাজ শেষে তাদেরকে চুক্তি অনুযায়ী পাওনা মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার বাকি একটি সড়কের কাজ তারা শেষ করেছে। সেই কাজের ফিনিশিং হয়নি, বৃক্ষরোপন ও ঘাস কাটাও বাকি আছে। তারপরও আমি তাদেরকে এক সপ্তাহ পর টাকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ শুনি তারা নাকি উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়েছিল। আমি ঘটনাটি জানার পর তাদেরকে সন্ধ্যায় ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা কয়েকদিনের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন বলেন, সড়কের মাটিকাটার কাজ করে মজুরি পায়নি, এই অভিযোগে বেশ কিছু শ্রমিক একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কুর্শা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির নিস্পত্তি করা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই